রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের লক্ষ লক্ষ মানুষ শরণার্থী হয়ে অন্য দেশে
শুভঙ্কর সাহা
গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সংবাদের শিরোনামে রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের খবর। আর এই যুদ্ধের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন পাশ্ববর্তী দেশগুলিতে। প্রতিদিন এই শরণার্থীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে।
এতদিন সাধারণ মানুষ রাশিয়া সম্বন্ধে কিছু জানলেও আম আদমির মধ্যে ইউক্রেন নিয়ে খুব বেশি মাথা ব্যথা ছিল না। অনেকেরেই ধারণা ছিল, এই দেশটি আগে সোভিয়েত রাশিয়ার ছিল। কিন্তু গত মাসের শেষ থেকে ইউক্রেন একেবারে সাধারণ মানুষের হেঁসেলে ঢুকে গেছে।
এর সবথেকে বড় কারণ, হাজার হাজার ভারতীয় পড়ুয়া এই দেশ ছেড়ে ডাক্তারি পড়তে পাড়ি দিয়েছেন ইউক্রেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই সংখ্যাটি অন্তত ১৮ থেকে ২০ হাজার। তাঁদের অনেকেই এখনও ইউক্রেন এবং তার আশপাশের শহরে আটকে রয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ ভারতীয় এক ছাত্রের মৃত্যু সাধারণ মানুষকে শিহরিত করল।
কেন যুদ্ধ শুরু হল, তার সঠিক এখনও পরিষ্কার নয়। দুই পক্ষেরই বলার মতো কিছু যুক্তি আছে। প্রতিটি যুদ্ধে, প্রতিটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কিছু মানুষ ভিটেছাড়া হতে বাধ্য হন। ইউরোপের এই যুদ্ধেও ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এত বড় উদ্বাস্তু স্রোত পৃথিবীর বুকে আর আসেনি। মাত্র দুই সপ্তাহের এই যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে ১৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ শরণার্থী হয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
উদ্বাস্তু মানুষের স্রোত সবচেয়ে বেশি আছড়ে পড়েছে পোল্যান্ডে। এর বাইরে স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, মল্ডোভা ইত্যাদি দেশে আশ্রয় নিয়েছেন আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ। কেউ কেউ এই পার্শ্ববর্তী দেশ ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন আরও দূরের জার্মানি, ইংল্যান্ডে কিম্বা বুলগেরিয়াতে।
এক হিসাব অনুযায়ী এই শরণার্থীদের মধ্যে অন্তত ১ মিলিয়ন শিশু।প্রচন্ড ঠান্ডা, জল, খাবার, ওষুধ, মাথার উপর ছাদ বাদ দিয়ে এখনই লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজ ভূমি ছেড়ে পরদেশে আশ্রয়প্রার্থী। কবে আবার এইসমস্ত ঘরছাড়া মানুষ তাঁর নিজের দেশে ফিরতে পারবেন, কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, বোমা, গুলি, বারুদের গন্ধ পেরিয়ে এই ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা কবে আবার স্কুলের আঙিনায় ফিরবে, কবে তাঁরা জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু ফিরে পাবেন, তা এখনও অজানা।
লক্ষ্যনীয় বিষয়, এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সমস্যা সমাধানের জন্য দেশনায়কেরা যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছেন। তবে, সাধারণ মানুষ চান, আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ তার সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাক। যুদ্ধ কখনোই কোনও সমাধান নয়। বড় বড় দুটি বিশ্বযুদ্ধ পেরিয়ে এসেও মানব সভ্যতা আজ একটুও শিক্ষা নেয়নি, আজকের এই যুদ্ধ তারই এক জ্বলন্ত প্রমাণ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন