Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২২

TOUR : সিকিয়াঝোরা ও চিলাপাতা জঙ্গলের বৈশিষ্ট্য

Characteristics-of-Sikiajhora-and-Chilapata-forests

সিকিয়াঝোরা ও চিলাপাতা জঙ্গলের বৈশিষ্ট্য 

অজয় মজুমদার 

আলিপুরদুয়ার জেলার উত্তর পানিয়ালগুড়ির সিকিয়াঝোরা৷ এখানে একটা প্রাকৃতিক লেক আছে, যা দর্শনীয় কিছু নয়। তবে এখানে নৌকাবিহার করার ব্যবস্থা আছে৷ সব কিছুই দেখভালের দায়িত্ব স্বনির্ভর মহিলাদের। এমনই একটি স্বনির্ভর দলের নাম সরস্বতী৷ সিকিয়াঝোরা জলাশয়ে পদ্ম এবং শালুক রয়েছে প্রচুর৷ লাল রঙের দুষ্প্রাপ্য শালুক ফুল প্রচুর ফুটে আছে। ভীষণ দৃষ্টি নন্দন লাগলো৷ সিকিয়াঝোরায় টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয়৷ অনেক কথা হল স্বনির্ভর দলের সদস্য কুন্তির সঙ্গে৷ ওখানে ওরা রান্না করে গেস্টদের খাওয়ান। এছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ, গেস্টদের যত্ন করা, সবই ওদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে৷ আয় ব্যয়ের হিসাব রাখতে হয়। এখান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে ওদের কোনওমতে দিন গুজরান হয়|

ওখান থেকে বেলা দুটো নাগাদ আমরা চিলাপাতার জঙ্গলের হোমস্টেতে গেলাম৷ এখানেও জয়ন্তীর মতো সেই মোহনচূড়া হোমস্টে রয়েছে৷ একই মালিকের৷ চিলাপাতায় ওরা আমাদের প্রয়োজনমতো ঘর দিতে পারেনি৷ সেইজন্য দুটি ঘর ওদের হোমস্টের পাশের অরণ্যবাসকে দিয়েছিল৷ সেই ঘরের পেছনে উন্মুক্ত ধানক্ষেত৷ মাঝে মাঝে রাতে সেখানে হাতি আসে৷ সেইজন্য ঘরগুলি সব উঁচু করে তৈরী করা। বিকেলে পায়ে হেঁটে বেশ খানিকটা ঘুরলাম| মাঝে মাঝেই ময়ূরের দেখা পেলাম। চিলাপাতার জঙ্গল বেশ ঘন| ওখানে দামি গাছ রয়েছে৷ তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শাল, সেগুন, খয়ের, শিমুল ইত্যাদি৷ তবে হাতি নিয়ে ওখানকার মানুষ বেশ ভিত এবং সন্ত্রস্ত। 

কিছু দূর হাঁটলেই বেশ কয়েকজন ইউনিফর্ম পরা বন রক্ষীর সঙ্গে দেখা হল। ওরা বাইরে থাকতে নিষেধ করলো৷ তাই ফিরতে হল। দেখলাম ধানক্ষেত্রের ওপারে কিছু গ্রাম রয়েছে৷ ক্ষেতে ধান প্রায় পেকে উঠেছে। কিছু ধান কাটা হয়ে গেছে৷ সন্ধেয় ঘরে ফিরে এলাম। আমার ঘরের পেছনেই একটা খাল। খালটিতে জল আছে। হাতি অনেক সময় এখানে জল খেতে আসে। পরের দিন সকালে আমাদের ঘরের পেছনে বড় ওই ধানক্ষেতে এক ঝাঁক ময়ূর দেখলাম। ওরা ধানের দানা খুঁজে খুঁজে খেতে ব্যস্ত। চিলাপাতার হোমস্টেতে আমরা একটি রাত ছিলাম৷ পরের দিন সকালে অর্থাৎ আমরা ব্রেক ফাস্ট সেরে সিসামারির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম৷ 

বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ হোমস্টে পৌছালাম৷ হোম স্টের নাম জলদাপাড়া রাইনো কটেজ। পাশেই সিসামারি নদী৷ নদীর নামে ওই জায়গার নাম সিসামারি৷ অসাধারণ একটা হোমস্টে আমরা পেয়েছিলাম৷ হোমস্টে বললে ভুল হবে৷ একটা রিসোর্ট। একদম গরুমারা জঙ্গলের মধ্যে৷ বন্যপ্রাণীরা জল খেতে আসলে আমাদের তিনতলার মতো উঁচু ঝুল বারান্দা থেকে সব দেখা যেত। আসলে এই ঘরটি একটি টাওয়ারের মতো উঁচু। ১০ জন এই ঘরে থাকা যায়। কিন্তু আমরা ছিলাম দুজন। তাছাড়া, টুসির আতিথিয়তায় আমরা সবাই আপ্লুত৷ বড়ি দিয়ে বোরলি মাছের ঝোল৷ অসাধারণ তার স্বাদ৷ এখানে সবারই খাওয়াটা একটু বেড়ে গিয়েছিল। 


পরিচয় হলো সায়ন প্রীতম বড়ালের সঙ্গে। তিনি পেশায় মাইক্রোবায়োলজিস্ট| ব্যাঙ্গালোরে একটা কোম্পানিতে চাকুরী করেন। বন্য প্রাণীর ছবি তুলে তথ্যচিত্র করা ওঁর নেশা৷ ব্যাঙ্গালোর থেকে পোলো গাড়ি চালিয়ে এই জঙ্গলে এসেছেন। ক'দিন ধরে যেসব বন্য প্রাণীর ছবি তুলেছেন, তা আমাদের দেখালেন। একটি অনবদ্য পেঁচার ছবি তুলেছেন। একটা চিতার ছবি, অনেকগুলি গন্ডারের ছবি ওঁর ক্যামেরার লেন্সে ধরা পরেছে৷ এখান থেকে ও জয়ন্তী যাবেন৷ ওখানে সাত দিন থাকবেন৷ ওঁর কোনও সঙ্গী নেই৷ 


ছেলেটি রবীন্দ্রনাথের বলাই চরিত্রের মত। একটু ব্যতিক্রমী৷ কথা বলে ভালো লাগলো ২৯ বছরের সায়ন প্রীতমের সঙ্গে৷ এই কদিনে গরুমারা জঙ্গলটাকে ও স্টাডি করে ফেলেছেন। কোন সময় জঙ্গলে গেলে কোন প্রাণী দেখা যাবে এবং কোথায় বসলে তার ছবি তোলা যাবে৷ সেই নির্দিষ্ট জায়গা এবং সময় সব জানা ছিল তাঁর৷ সেইমতো ও টিকিট কেটে রাখতেন। সাফারির গাড়িগুলিকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ও ব্যবহার করতেন। সবকিছু যোগাযোগ করে রাখতেন। গাইডও সঙ্গে থাকতো৷ সেইমতো ও নিজের গাড়ি নিয়ে ছুটতেন৷ জলদাপাড়ায় ওঁর মত মতো ছুটতে পারলেই দুষ্প্রাপ্য প্রাণীদের দেখা সম্ভব হতো।‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন