বক্সার জঙ্গলের জীববৈচিত্র্যর রহস্যময় ঘটনা
অজয় মজুমদার
বক্সারের বিড়াল প্রজাতির জেনেটিক্যাল স্টাডি করে দেখা গেছে- বিড়ালের থেকে এরা পৃথক। আইইউসিএন এর লিস্টে এই জাতীয় লেপার্ড বিপদ সীমা বা রেডলিস্টে রয়েছে। অর্থাৎ অবলুপ্তির তালিকায়৷ মার্বেল ক্যাট একটি ছোট্ট বন বিড়াল৷ হিমালয়ের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অরণ্য অঞ্চলের ২৫০০ মিটার উচ্চতায় এরা থাকে৷ এরাও অবলুপ্তির হুংকার দিচ্ছে৷ আইইউসিএন ২০১৫ থেকে রেড তালিকাভুক্ত করেছে৷
ফিশিং ক্যাট বা বাঘরোল৷ এটা পশ্চিমবঙ্গের সংরক্ষণ তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ ২০১৬ সাল থেকে আইইউসিএন এই প্রানিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে৷ এই প্রাণীটি জলের কাছাকাছি থাকে৷ কারণ, এরা মাছ শিকার করে খেয়ে জীবনধারণ করে৷ এদের ওজন ৮.৮ কেজি। এরা ফেলিডি পরিবারভুক্ত এবং কার্নিভোরাস বর্গের প্রানি৷ অনেকে একে মেছোবিড়াল বলেও থাকেন৷ এই প্রাণীদের বাঘের মত ডোরাকাটা দাগ থাকে৷ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের গ্রীন ওয়েভ নামের একটি সংগঠন ফিশিং ক্যাট সংরক্ষণের জন্য গ্রামেগঞ্জে সচেতনতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
জঙ্গল ক্যাট এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিলিস কেয়াস৷ এই প্রাণীটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ চায়নাতে বেশি বিস্তারলাভ করতে দেখা যায়৷ জলাজমি এবং ঘন জঙ্গল এই প্রাণীটি পছন্দ করে৷ এটিও ফিলিডি পরিবারের কার্নিভারা গণের অন্তর্ভুক্ত৷ এছাড়া আছে লেপার্ড ক্যাট। এরাও ফিলিস গনের একটি বিড়াল৷ গভীর জঙ্গল এদের পছন্দের জায়গা৷ এদের পাগুলি লম্বা। দেহের লোম বাদামি, রেডিস, অথবা ধূসর বর্ণের হয়।
এছাড়াও এইসব জঙ্গলে বার্কিংডিয়ার বা মুন্টজ্যাক হরিন আছে৷ এই হরিণগুলি চিতল ছোপ কাটা৷ প্রাণীটি পৃথিবীতে ১৫ থেকে ৩৫ মিলিয়ন বছরের পুরানো৷ ফ্রান্স, জার্মানি এবং পোল্যান্ডে এদের বসবাস রয়েছে৷ এরা সার্ভিডি পরিবারভুক্ত আর্টিওভ্যাকটিলিয়া বর্গের প্রজাতির হরিণ৷ একটা চিৎকার করে তাদের প্রভাবকে জানান দেয়৷ এই শব্দে আকর্ষনে পড়ে অন্য হরিণেরা অনেক সময় তার কাছে আসে।
চিতল হরিণ এইসব জঙ্গলে আছে। এই হরিণগুলির সারা গায়ে ছোপ ছোপ দাগ যুক্ত৷ এই জঙ্গলে বাঘ খুব বিরল৷ এছাড়াও, এশিয়াটিক ব্ল্যাকবিয়ার বা কালো ভল্লুক রয়েছে। আরও কিছু প্রাণী রয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রাণী হলো, সাম্বার বা বড় হরিণ৷ ২০০৮ সাল থেকে আইইউসিএন একে রেড লিস্টে ফেলেছে৷ বন্যশুকর জলদাপাড়া জঙ্গলে আমরা দেখেছিলাম। শেয়ালও রয়েছে এসব জঙ্গলে৷
বক্সার জঙ্গলে বিভিন্ন ধরনের পাহাড়ি ছাগল দেখা যায়৷ বক্সা জঙ্গলে সরীসৃপদের মধ্যে রয়েছে বেশকিছু রক পাইথন, গোখরো সাপ, পিট ভাইপার একজাতীয় বিষধর সাপ। এই সাপগুলি ২ ফুট মতো লম্বা হয়৷ এর রং লাল, বাদামি বা ধূসর থেকে গাঢ় চিহ্নযুক্ত কালো পর্যন্ত হয়। এর কামড় মানুষের জন্য মারাত্মক হয় না। বক্সার জঙ্গলে আচমকা হাজির হয়েছিল সালাজার পিট ভাইপার সাপ৷
জঙ্গলের রায়ডাক নদীতে বা অন্যান্য নদীতে বোরোলি এবং অন্যান্য সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়৷ ১০০ প্রজাতির মাছ রেকর্ড করা হয়েছে বক্সার জঙ্গলের নদী-নালাগুলিতে৷ বক্সার জঙ্গল প্রজাপতির জন্য বিখ্যাত। ৪১৫ প্রজাতির প্রজাপতির রেকর্ড পাওয়া যায় বক্সার মিউজিয়ামে। রাজাভাতখাওয়াতে একটি মুক্ত প্রজাপতির সংরক্ষণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। বক্সার অরণ্যে ৫১৬ টি প্রজাতির পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে। এখানকার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পাখি হল– গ্রেট ইন্ডিয়ান হামবিলস, প্যারোটবিল, ইন্ডিয়ান লরিকিট, ব্লু-রক, পি-ফাউল, কালোমাথা যুক্ত বুলবিল, ধূসর এবং গ্রিন ব্যাকট টিট, ধূসর মাথাযুক্ত ফিসিং ঈগল, রেড হেডেড ক্যালকন এবং ময়ূর৷
বক্সা টাইগার কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের মিউজিয়াম দেখা শেষ করে আমরা ক্যাকটাস হাউস দেখতে গেলাম৷ রাজাভাতখাওয়ার শকুন প্রজনন কেন্দ্রটি বক্সা জাতীয় উদ্যানে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে একমাত্র এখানেই গড়ে উঠেছে শকুন গবেষণা কেন্দ্র৷ ভারতের সাতটি নতুন শকুন প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে৷ ১৯ টি চিড়িয়াখানা থেকে সমস্ত শকুন স্থানান্তর করা হয়৷
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং আইইউসিএন রেড লিস্টে সমালোচনামূলকভাবে বিপন্ন প্রজাতির শকুন সংরক্ষণের উপর দৃষ্টি দেওয়া হয়৷ কেন্দ্রের গবেষণা এই আবিষ্কারকে নিশ্চিত করেছে যে, গবাদি পশুকে প্রদাহ বিরোধী ড্রাগ ডিক্লোফেনাক ব্যবহার শকুন জনসংখ্যা হ্রাসের গুরুত্বপূর্ণ কারন। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রজনন কেন্দ্রের ধারেপাশেও আমাদের যেতে দেওয়া হয়নি। এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে আমাদের ফিরতে হলো৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন