উত্তরবঙ্গের অরণ্য জৌলুস হারাচ্ছে (পর্ব–৩)
অজয় মজুমদার
সকাল-বিকেল জঙ্গলের প্রাণীদের উপর নজরদারি চালানোর জন্য জয়ন্তীর জঙ্গলে দুটি টাওয়ার রয়েছে। এই জঙ্গলে ঘুড়তে আসা পর্যটকেরা বন্যপ্রাণী দেখার জন্য এই টাওয়ারে চড়ে বসেন। আমরাও একটি ওয়াচ টাওয়ারে উঠে দেখলাম। কিছু ছবিও তুললাম৷ কিন্তু একটি প্রাণীরও আমরা দেখা পেলাম না৷ যদিও এব্যাপারে হতাশ হওয়ার কিছু নেই৷ অনেক পর্যটকের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা স্বাভাবিক।
একজন রুশ প্রাণী বিশেষজ্ঞ ইউরি দিমিত্রিয়েভ বলেন, 'আমি যখন প্রথম একটি অভয়ারণ্যে গিয়েছিলাম, তখন প্রচন্ড হতাশ হয়ে পড়ি৷ আমি যে প্রত্যেকটি ঝোপের আড়ালে একটি করে বন্যপ্রাণী দেখব, এমন আশা করিনি ঠিকই, কিন্তু শেয়াল বা খরগোশ অন্তত দেখতে পাবো- এমন আশাই ছিল৷ সারাদিন ঘুরে আমি পাশের লোকটিকে আমার হতাশার কথা বললাম। সে মুচকি হেসে বল্লেন, আপনি কিছু দেখতে পেলেন না বটে, তবে গাছের আড়াল থেকে, গর্তের ফাঁক দিয়ে অনেক অনেকগুলি চোখ আপনাকে দেখছে। অনেক বন্যপ্রাণী উদ্বেগের সঙ্গে অপেক্ষা করেছে, কখন আপনি চলে যাবেন এবং তারাও একটু নিশ্চিন্তে চলাফেরা করবে, এ ডালে ও ডালে উড়ে বেড়াবে৷'
তবে আমাদের একেবারে নিরাশ করেনি জয়ন্তীর জঙ্গল৷ বেশকিছু ময়ূর দেখলাম৷ কিছু হনুমানও দেখেছি৷ তবে আমাদের একটি গাড়ির চাকা পাংচার হয়েছিল৷ এরমধ্যেই আমাদের ড্রাইভারেরা হাতির গর্জন শুনতে পান। আমাদের সবাইকে সামনে তিনটি গাড়িতে ভাগ হয়ে বসার প্রস্তাব দেন৷ হাতি চলে আসলে পালাবার পথ পাওয়া যাবে না৷
আমাদের গাইড বললেন, এই জঙ্গলে অনেক লেপার্ড আছে। ভাগ্য ভালো হলে চোখে পড়তেও পারে৷ আধঘন্টা সময়ের মধ্যে আমাদের টায়ার বদলানো শেষ হলো৷ ফিরলাম সন্ধে নাগাদ। জয়ন্তী নদীর শুকনো পাথরের ওপর তির তির করে ব্যয়ে যাওয়া জলের উপর দিয়ে আমরা প্রবেশ করলাম আমাদের আবাস মোহন চূড়ায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন