উত্তরবঙ্গের অরণ্য জৌলুস হারাচ্ছে (পর্ব–২)
অজয় মজুমদার
বক্সা জেল, বক্সা ফোর্ট ছাড়াও ছিল চুনিয়া ঝোরা৷ আমরা সান্তালাবাড়ি থেকে গেলাম। এই দুর্গ থেকে ট্রেকিংয়ের পথ হল- সান্তালাবাড়ি থেকে বক্সা দুর্গ, দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। বক্সা দুর্গ থেকে রোভার্স পয়েন্ট, দূরত্ব ৩ কিলোমিটার, সান্তালাবাড়ি থেকে রুপাং পয়েন্ট, দূরত্ব ৩ কিলোমিটার, বক্সা দুর্গ থেকে লেপচাখা, দূরত্ব ৫ কিলোমিটার, বক্সা দুর্গ থেকে চুনাভাতি, দূরত্ব ৪ কিলোমিটার৷
১৯৩০ সাল পর্যন্ত বক্সা দুর্গটি উচ্চ নিরাপত্তাযুক্ত কারাগার এবং ডিটেনশন ক্যাম্প হিসাবে ব্যবহৃর হতো। আন্দামানের সেলুলার জেলের পর এটিও ছিল ব্রিটিশ ভারতের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং দুর্গম কারাগার৷ বিচারে বন্দি করে রাখার জন্য পাহাড়ের ওপর দুর্গম এই অঞ্চলকে ইংরেজ সরকার বেছে নিয়েছিল৷ ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত এখানে বন্দি ছিলেন ৫২৫ জন৷ ১৯৫০ সালে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বিনয় চৌধুরী, সতীশচন্দ্র পাকড়াশী, ননী ভৌমিক, পারভেজ শাহেদীর মতো কমিউনিষ্ট বিপ্লবী এবং বুদ্ধিজীবীরা এই দুর্গে বন্দি ছিলেন৷
ওই দিন আমরা খাওয়ার পর বেলা আড়াইটের সময় জয়ন্তীর জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। জয়ন্তী পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায় অবস্থিত। এই অরন্যের উত্তর সীমানাটি হল ভারত–ভুটান আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং সিঞ্চুলা পর্বতমালা। এই অরন্যের উচ্চতা ১৭৫৫ মিটার। এই অরন্যের মধ্য দিয়ে পানা, জয়ন্তী, ডিমা, রায়ডাক, বালা, গাবুর বাসরা, সংকোষ নদী প্রবাহিত।
বক্সা দুয়ার থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে জয়ন্তী। ঘন সবুজ অরণ্যের মধ্যে জয়ন্তী নদী। পাহাড় দিয়ে ঘেরা ছোট্ট জনপদ৷ বক্সার অরণ্য শিমুল, সাল, সেগুন, শিশু, দেবদারু গাছে ছেয়ে রয়েছে। আমরা জয়ন্তীর জঙ্গল সাফারির জিপসি গাড়িতে ২৭ কিলোমিটার ঘুরেছিলাম৷ বনাঞ্চলের বহু গাছ লাগানোর জায়গা রয়েছে৷ বন ফাঁকা হয়ে আছে। কেন যে নতুন করে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে না, তার কোনও উত্তর নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন