সমকালীন প্রতিবেদন : বীরভূমের দাঁইহাটের নবীন ভাস্কর দক্ষিণেশ্বরের পাশাপাশি সিউড়িতে মা ভবতারিণীর প্রতিমা বানিয়েছিলেন। ১৪৬ বছর আগে বিশেষ তিথিতে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের পূজিত মাতৃমূর্তির আদলে তৈরি মা ভবতারিণীর সেই দেবীমূর্তিই বংশানুক্রমে পূজিত হয়ে আসছে এখানে। পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস, বংশের সদস্য হিসাবে এই মন্দিরে বিরাজ করেন মা ভবতারিণী। তাই সাধক কালিপ্রসাদ জীবদ্দশায় মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন নি। কালী পুজো উপলক্ষে মন্দির চত্বর এখন আলোয় ঝলমলে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আয়োজনে ছোট করে বিধি মেনে পুজোর আয়োজন হল এখানে। ভক্তদের জন্য প্রসাদেরও আয়োজন ছিল।
কথিত আছে, ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে সাধক কালিপ্রসাদের স্মৃতি বিজড়িত কালীবাড়িতে কষ্টিপাথর এবং মার্বেল দিয়ে দক্ষিণেশ্বরের শ্যামা মূর্তির বিখ্যাত ভাস্কর নবীন ভাণ্ডারিকে ডেকে দেবী মূর্তি স্থাপনের অভিলাষ ব্যক্ত করেছিলেন সাধক কালিপ্রসাদের দ্বিতীয় পুত্র কুলদানন্দ মুখোপাধ্যায়। সেই থেকেই একটানা চলে আসছে মাতৃ আরাধনা। স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিতা শ্যামার নিত্য সেবা, প্রত্যহ ১০ জন করে ব্রাহ্মণ সেবা এবং ভোজন দক্ষিণাদানের ব্যবস্থা প্রচলন করেন। এই প্রথা যাতে চলতে পারে, তাই তিনি অর্পণনামার মাধ্যমে তাঁর সমস্ত সম্পত্তি দেবোত্তর করে যান। আর সেই দেবোত্তর সম্পত্তি থেকেই কুলদানন্দ প্রতিষ্ঠিত এই কালীবাড়িতে প্রত্যহ সেই রীতি এখনও প্রচলিত রয়েছে।
কুলদানন্দের পুত্র দক্ষিণারঞ্জন বীরাচারী তান্ত্রিক সাধক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তিনিও অত্যন্ত কালীভক্ত ছিলেন। তাঁর কর্মকান্ডের কারণেই সিউড়ি কালিবাড়ি দক্ষিণাবাবুর কালীবাড়ি নামে আখ্যায়িত হয়েছে। সিউড়ির এই কালীবাড়িতে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সারাবছর ধরে বহু ভক্ত এখানে উপস্থিত হন। তাঁরা ভোগ প্রসাদ পান। এই স্থানটি সাধকদের জন্যও অন্যতম সাধনস্থল। এই স্থলে তারাপীঠের বামাক্ষ্যাপা, মোহনানন্দ ব্রহ্মচারী, সিউড়ি রামকৃষ্ণ আশ্রমের সংঘগুরু স্বামী সত্যানন্দ, শ্রী শ্রী অমল ব্রহ্মচারী, বক্রেশ্বরের খাকি বাবা শ্রী শ্রী সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ, জহুরা মা পাথর চাপুরীর দাতা সাহেবের মতো বহু সাধক এখানে সাধনা করতে এসেছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন