সমকালীন প্রতিবেদন : করোনার পরিস্থিতির কারণে প্রায় দু'বছর ধরে বন্ধ শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা। সেই কারণে পৌষ মেলাতে আসা রাজ্যের বিভিন্ন হস্তশিল্পের পাশাপাশি বোলপুরের গ্রামীন শিল্পীরা দুবছর তাঁদের পণ্য বিপণন করতে পারেন নি। আর তার প্রভাব পরেছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। তাই এইসমস্ত গ্রামীন হস্তশিল্পীদের কথা মাথায় রেখে করোনা বিধি মেনে যাতে ফের পৌষ মেলার আয়োজন করা যায়, তার জন্য শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানালো শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা মাঠ বাঁচাও কমিটি এবং বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি।
১৮৪৩ সালে ২১ ডিসেম্বর বাংলার ৭ পৌষ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হন। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ও প্রচারের স্বার্থে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ১৮৪৫ সালে কলকাতার গীরিটির বাগানে উপাসনা, ব্রাহ্ম মন্ত্র পাঠের আয়োজন করেন। এটিকেই পৌষমেলার সূচনা বলে ধরা হয়। পরবর্তীকালে ১৮৬২ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে আশ্রম প্রতিষ্ঠার কথা ভাবেন। ১৮৯১ সালে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মমন্দির বা উপাসনা গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিকে শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের সূচনা হিসেবে ধরা হয়। ১৮৯৪ সালে এই পৌষ উৎসবের পাশাপাশি মন্দির সংলগ্ন মাঠে শুরু হয় পৌষ মেলা। দিন দিন মেলার পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে পূর্বপল্লির মাঠে এই মেলার আয়োজন হয়ে আসছে।
কিন্তু ২০২০ সালে করোনার কারণে বন্ধ রাখতে হয়েছিল রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত এই পৌষমেলা৷ যার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন বীরভূম সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার গ্রামীন হস্তশিল্পীরা। এবারে পরিস্থিতি অনেকটা ভালো বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। আর তাই এবারে যাতে ফের পৌষমেলার আয়োজন করা হয়, তারজন্য শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন সুবজকলি সেন এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিল বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি এবং পৌষমেলা বাঁচাও কমিটি।
তাঁদের দাবি, বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে৷ তাই এবছর পৌষমেলার আয়োজন করা হোক। পৌষমেলা শান্তিনিকেতন তথা রবীন্দ্র সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ৷ এছাড়া, ছোট ব্যবসায়ীদের সারা বছরের রোজগারের একটা পথ এই মেলা৷ তাই পৌষমেলা যদি এবারেও না হয়, তাহলে বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকায় গ্রামীন অর্থনীতি একটা বড় ক্ষতির মুখে পরবে। তাঁরা আরও জানান, ২০১৯ সালে মেলায় দোকান দেওয়ার জন্য যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই সেই টাকা ফেরত পাননি। তাঁরা যাতে সেই টাকা ফেরত পান, তারও দাবি জানানো হয়।
শান্তিনিকেতন পৌষ মেলা মাঠ বাঁচাও কমিটির সদস্য তথা ব্যবসায়ী আমিনুল হুদা এই প্রসঙ্গে জানান, 'পৌষমেলা না হলে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। আমরা চাই পৌষ মেলা হোক।' বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিং বলেন, 'বোলপুরের অর্থনীতি এই পৌষ মেলার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। তাই আমরা মেলার আয়োজন করার দাবিতে চিঠি।' শুধু মেলা বাঁচাও কমিটির সদস্যরা কিম্বা বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতিই নয়, এবছর থেকে ফের মেলার আয়োজন হোক, তা চাইছেন শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক থেকে স্থানীয় বাসিন্দারাও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন