শম্পা গুপ্ত : 'বাঁধনা পরব' পুরুলিয়ার একটি জনপ্রিয় লোক উৎসব। দুর্গাপুজোর পর থেকেই এই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। কালীপুজো শেষ হতেই শুরু হয় এই পরব। আর তাকে ঘিরে এখন জমজমাট মানভূম অঞ্চল। গরু বা মহিষ হল এই পরবের অন্যতম চরিত্র। এই উৎসবটি প্রধানত কুর্মি, কোড়া, লোধা সম্পদায়ের মানুষের উৎসব। তবে সাঁওতাল এবং মুন্ডা সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে এই পরবটি সোহরায় নামে পরিচিত।
এই উৎসবে একটি গরু বা মহিষকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে শুকনো চামড়া মুখের সামনে এনে, লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে তাকে খেপিয়ে তোলা হয়। সঙ্গে চারধারে বাজতে থাকে ধামসা, মাদল, ঢোল। এভাবেই গরু বা মহিষের যে শক্তি পরীক্ষার লড়াই চলে, সেটিই বাঁধনা পরব। পরবে যে গান গাওয়া হয়, তাকে আহিরা বাঁনা গান বলা হয়। পরবের প্রস্তুতি হিসেবে গ্রামের মানুষেরা তাঁদের ঘরদোর পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নের কাজ শুরু করে দেন। গ্রামের পথে পথে আগমনী গান বাজতে শুরু করে। দৈনন্দিন কাজকর্ম ভুলে গ্রামের মানুয় মেতে ওঠেন এই উৎসবে।
বাঁধনা পরবের প্রধান চরিত্র গরু বা মহিষকে নানা রঙে সাজিয়ে তোলা হয়। এমনকি তার সিংগুলিও তেল, সিঁদুর মাখিয়ে রঙিন করে তোলা হয়। মাথায় পরানো হয় নতুন ধানের মুকুট। এইভাবে সাজিয়ে তোলার পর গ্রামের ফাঁকা মাঠে নিয়ে গিয়ে তাঁকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে শুরু হয় মূল পরব। সন্ধের অন্ধকার না নামা পর্যন্ত চলে এই উৎসব। শুধু পুরুলিয়া নয়, এই জেলার পাশাপাশি বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এমনকি প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খন্ডের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতেও মানুষ এই উৎসবে মেতে উঠেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন