সমকালীন প্রতিবেদন : শেষ রক্ষা হলো না। শেষ পর্যন্ত বিশ্বভারতীর আঙিনা থেকে সরিয়ে দেওয়া হল ১০৫ বছরের পুরনো, রবীন্দ্র স্নেহধন্য আলাপিনী মহিলা সমিতিকে। এমন দিন যে আসবে, তা কখনও কল্পনা করতে পারেন নি এই সমিতির সঙ্গে যুক্ত সদস্যারা। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের জন্য আজকের দিনটি দু:খের দিন বলে বর্ণনা করেছেন তাঁরা। তবে সমিতির সদস্যারা এখনই হাল ছাড়ছেন না। তাঁরা নিজেদের অধিকার আদায় করতে আন্দোলন চলিয়ে যাবেন। তাঁরা আশা করেন, একদিন তাঁরা সফল হবেন।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতীর উপাচার্যের পদে যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই গোলমালের শুরু। তাঁর একের পর এক কর্মকান্ডে বিতর্ক তৈরি হয় বিশ্বভারতীতে। আলাপিনী মহিলা সমিতির সদস্যা জয়তী ঘোষ, মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়দের দাবি, গত বছর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নির্দেশে প্রথমে আলাপিনী মহিলা সমিতিকে একটি চিঠি দিয়ে ঘর ছেড়ে দিতে বলা হয়। সমিতি ঘর না ছাড়ার পাশাপাশি উপাচার্যের এই নির্দেশিকা বাতিলের দাবি জানিয়ে সমিতির পক্ষ থেকে আন্দোলন এবং প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠানো হয়। তাতে অবশ্য কোনও কাজ হয় নি।
এরপর বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে আলাপিনী মহিলা সমিতির ঘরে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। আলাপিনী মহিলা সমিতির ব্যবহৃত আসবাবপত্র বের করে বিশ্বভারতী অন্যত্র সরিয়ে রাখে। কিছুদিন আগে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সমিতিকে জানানো হয় যে, তাদের সমিতির ব্যবহৃত জিনিসপত্রগুলি বিশ্বভারতীর স্টেট অফিসে রাখা আছে। সোমবার ফের জানানো হয় যে, আজকের মধ্যেই তারা যেন সেই জিনিসগুলি নিজেদের দায়িত্বে সরিয়ে নিয়ে যান। সেই অনুযায়ী এদিন স্টেট অফিস থেকে সমিতির জিনিসপত্র আপাতত নিজেদের পরিচিত একজনের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তোলেন সমিতির সদস্যারা।
এদিন সমিতির সদস্যারা আক্ষেপের সুরে জানান, বিশ্বভারতীর কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছিল রবীন্দ্র স্নেহধন্য এই মহিলা সমিতি। সমিতির কাজ চালানোর জন্য ইন্দিরা দেবী প্রথম সমিতিকে ঘরটি দিয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধী প্রথম ভারতে এসে এই ঘরে পা রেখেছিলেন। গোটা দেশে এমন শতাধিক বছর প্রাচীন মহিলা সমিটি কটা আছে সন্দেহ। ন্যাকও বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য মহিলা সমিতি গড়ে তোলার কথা বলছে। আর সেখানে বিশ্বভারতীর বর্তমান কর্তৃপক্ষ আলাপিনী মহিলা সমিতিকে বেঘর করলো। তবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সমিতি তার নৈতিক আন্দোলন জারি রাখবে বলে সমিতির সদস্যারা জানালেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন