সমকালীন প্রতিবেদন : প্রতিমা তৈরি করে দুর্গাপুজোর আয়োজনের বদলে এবারেও কোভিড বিধি মেনে কোনওরকমে ঘট পুজোতেই সীমাবদ্ধ থাকছে উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা জমিদারবাড়ীর ৩০০ বছরের দুর্গাপুজো। আর তাই কিছুটা হলেও মন খারাপ জমিদার বাড়ির সদস্য এবং এলাকার বাসিন্দাদের।
১২২৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রসন্নময়ী মায়ের পুজো হয়ে আসছে গোবরডাঙা জমিদারবাড়িতে। আর তার প্রায় ১০০ বছর আগে থেকে গোবরডাঙা জমিদারবাড়ীতে শুরু হয় মা দুর্গার পুজো। মা প্রসন্নময়ীর পুজো দেওয়ার পরেই দুর্গার আরাধনা শুরু হয়। দেখতে দেখতে সেই পুজো ৩০০ বছর পার করে ফেলেছে।
গোবরডাঙা জমিদারবাড়ীতে কয়েকটি দিনের জন্য উমা আসেন সপরিবারে। কর্মসূত্রে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা জমিদারবাড়ীর সদস্যরাও মায়ের টানে বাড়িতে ফেরেন। হই হই করে কেটে যায় কয়েকটা দিন। কিন্তু গত দু'বছর ধরে আর ফিরছেন না জমিদারবাড়ীর সদস্যরা। কারণ করোনা পরিস্থিতি। শুধু প্রসন্ন মায়ের মন্দিরে ঘট পুজোর মাধ্যমে পূজিত হচ্ছেন দেবী দুর্গা।
ফি বছর জন্মাষ্টমীতে রাজবাড়ীর ঠাকুরদালানে মায়ের কাঠামোতে মাটি পড়ে। কিন্তু গত বছর থেকে তার ব্যতিক্রম ঘটছে। মহালয়ার দিন প্রসন্নময়ী মায়ের মন্দিরে ঘট পেতে পুজোর পর সেই ঘট ঠাকুরদালানে নিয়ে যেতেন রাজ পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু গত বছর থেকে কোভিড পরিস্থিতির জন্য সেই প্রথার ব্যতিক্রম ঘটছে।
প্রতি বছর ঠাকুরদালানে মায়ের প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত হয় ষষ্ঠীতে। তবে কোভিড পরিস্থিতির জন্য প্রসন্ন মায়ের মন্দিরে ঘট পূজো হবে। ঐতিহ্য মেনে রাজবাড়ীতে ষষ্ঠীর দিনে কালী মন্দির থেকে কলা বউ নিয়ে এসে মায়ের অস্ত্রদান করা এবং সন্ধ্যারতি, অষ্টমী, নবমী, দশমী– সমস্তটাই নিয়ম করে শাস্ত্র মতে পুজো– এসব এবার কিছুই হচ্ছে না।
শোনা যায় এই পুজো উপলক্ষে সেকালে মোষ বলির প্রচলন ছিল। পরে তা পাঠা বলিতে রূপান্তরিত হলে ও ১৯৯৭ সালে বলি প্রথা নিয়ম করে বন্ধ হয়ে যায়। বিগত কয়েক বছর ধরে চাল কুমড়ো ও এক বলে দিয়ে নিয়ম রক্ষা করা হয়। রাজ পরিবারের সদস্যদের দাবি পৃথিবী কে ঠান্ডা করতেই দেওয়া হয় এক বলি।
কথিত আছে, মুখোপাধ্যায়দের পূর্বপুরুষরা পুজোর সূচনা করেছিলেন বাংলাদেশের যশোরে। বংশের আদি পুরুষ রাম মুখোপাধ্যায় উমার আরাধনা শুরু করেন যশোরের সারশা এলাকায়। পরে তাঁর বংশধরেরা গোবরডাঙায় চলে আসেন। তাঁর পুত্র শ্যামরাম মুখোপাধ্যায় গোবরডাঙার ইছাপুর চৌধুরী বাড়ির জামাই ছিলেন।
এই শ্যামরামের পুত্রই হলেন খেলারাম মুখোপাধ্যায়। তিনি মাতুলালয়ে পুজো শুরু করেন। সেই সময় ইংরেজ শাসন কাল। ২৪ পরগণার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন হিঙ্কল সাহেব। সাহেবের কাজের তদারকি করতেন ফেলারাম। তাতে খুশি হয়ে মাতুলালয়ের বেশ কিছু জমি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ওই ইংরেজ সাহেব। সেখানেই তৈরি হয় জমাদারবাড়ী।
সেসব এখন ইতিহাস। ইতিহাস হয়েছে কামান দেগে সন্ধি পুজোর সূচনাও। তবে জমিদারবাড়ি থেকে গিয়েছে জমিদারবাড়িতেই। পরিস্থিতির কারণে প্রথাগত নিয়মের কিছু বদল ঘটিয়ে এবার পুজোর আয়োজন হচ্ছে জমিদারবাড়ীতে। প্রতি বছরের মতো উমা ঠিকই আসছেন। কিন্তু জমিদারবাড়িতে নয়।
সেই কারনে জমিদারবাড়ীর সদস্য ও গোবরডাঙা বাসীর মন ভালো নেই। মনের ভেতরে রয়ে গেল আক্ষেপ। তবে এই জমিদার পরিবারের বর্তমান অষ্টম পুরুষের সদস্যরাই এই পুজো এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তাঁরা চাইছেন, আগামী দিনে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, আবার পুরনো জৌলুস ফিরে আসবে গোবরডাঙা জমিদারবাড়ীতে দূর্গাপুজোয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন