রোহিঙ্গারা শরণার্থী কেন ? (পর্ব-১)
অজয় মজুমদার
বৈচিত্র্যময় গণতন্ত্র ৷ নানা বিতর্কিত ইস্যুতে নানান দেশের সরকার তাদের মতামত বা নীতিকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা চালায়৷ প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করে। মানুষের ক্রম বর্ধমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা মানব সভ্যতার ঐতিহাসিক ও অনন্ত যাত্রার লক্ষ্য এবং সেই নিরিখে অনেক দেশই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বার্থে নিপীড়ন, নির্যাতন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করে নাগরিক দমনে নামানো হয়েছে রাষ্ট্রশক্তিকে ৷
মায়ানমারের আরাকান অঞ্চলের সংখ্যালঘু মুসলমান রোহিঙ্গা গোষ্ঠির মানুষ ৷ ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত মায়ানমারের প্রধানমন্ত্রী উ-নুর গণতান্ত্রিক সরকার রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকের স্বীকৃতি দিয়েছিল ৷ পরবর্তী সামরিক সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে ৷ সময়টা ১৯৮২ সাল। রোহিঙ্গাদের ন্যূনতম সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে থাকে ৷ কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও যখন রাখাইন থেকে উৎখাত করা গেল না তখন শুরু হয় রাষ্ট্রের সাহায্যে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ৷
সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের বিশ্বাস ছিল নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সূ চি যার দল হল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ক্ষমতায় এলে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি সুষ্ঠ সমাধান করবেন ৷ কিন্তু নিষ্ঠুর বাস্তবতা সূ চি রোহিঙ্গা শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করলেন না ৷ অথচ তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী ৷ বিস্ময় জাগে, নোবেল কমিটি সঠিক ব্যক্তিকে বাছাই করেছিলেন কিনা! সূ চি যখন সামরিক শাসনের অবসানের জন্যে কারাগারে বন্দি থেকে লড়ছেন, তখন বহু দেশের মানুষ তাঁর মুক্তিতে সোচ্চার হয়েছিলেন, অনুকম্পা দেখিয়েছিলেন ৷ আর তিনি যখন ক্ষমতায়, তখন তাঁরই দেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের অস্বীকার করছেন ৷ এই দ্বিচারিতা কেন ?
সূ চি দীর্ঘ নীরবতা ভাঙলেন ৷ কিন্তু সমালোচনা থামাতে পারলেন না ৷ বরং জোরালো হলো ৷ বিশ্বের মানুষ হতাশ হল। শান্তির নোবেল পুরস্কারজয়ী মানবাধিকারের লড়াকু নেত্রীর বক্তৃতা শুনে ৷ রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিয়ে মায়ানমারের নেত্রী এবং সরকারের পরামর্শদাতা আউং সান সূ চি মুখ খুললেন। তবে মায়ানমারের রাজধানী নে পিদত্ত থেকে দেওয়া তাঁর আধঘন্টার টিভি বক্তৃতায় মাত্র একবারই উচ্চারিত হলো, রোহিঙ্গা শব্দটা ৷ শুধু এ প্রসঙ্গে নয়, সূ চি–র গোটা বক্তব্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইল বহু বিতর্কিত পরিসর।
সূ চি গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে সংগ্রামের জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান ১৯৯১ সালে। এছাড়াও আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন ৷ যদিও রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তাঁর ভূমিকা তীব্রভাবে সমালোচিত ৷ এছাড়াও ২০২০ সালে মায়ানমারের সংসদীয় নির্বাচনে তিনি ও তাঁর দলের অধিকাংশ নেতার প্রতি ভোট চুরি ও অনিয়মের অভিযোগ আনে দেশটির সামরিক বাহিনী তাত মাড ও ৷ .....(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন