রোহিঙ্গা শরনার্থী কেন ? (পর্ব-৯)
অজয় মজুমদার
পশ্চিমবঙ্গের রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা সহনশীলতার বাইরে যায়নি। বনগাঁ, বসিরহাট সীমান্ত এবং উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু এলাকা দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা এ রাজ্যে প্রবেশ করেছে। ধরা পড়ার পর তাদের অনেকেই এখন জেলে। অসম দাঙ্গার পর উত্তরবঙ্গেও বেশকিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এদের কাউকেই 'পুশব্যাক' করা হবে না, এমন সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে।' কেন্দ্রের চাপে এ রাজ্যের বিভিন্ন হোমে বন্দি থাকা ২৩ জন মহিলা ও শিশুর পরিচয়পত্র বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। ইউনাইটেড নেশন হাইকমিশন ফর রিফিউজি রোহিঙ্গাদের জন্য বিশেষ পরিচয়পত্র দিচ্ছে। এরাজ্যে হোমে বন্দীদের ও তেমনই দেওয়ার কথা ছিল। বস্তুত এই নিয়ে রাজনৈতিক চাপান উতোরের মধ্যেই শুরু হয়েছে।
বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর কটাক্ষ 'যাঁর মাথায় তোষণ ছাড়া আর কিছুই নেই, তিনি তো রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাবেনই। কিন্তু এরপরে যদি হাজার হাজার রোহিঙ্গা এ রাজ্যে প্রবেশ করতে আরম্ভ করে, মুখ্যমন্ত্রী সামলাতে পারবেন তো ? এর উত্তরে শাসক দলের প্রতিনিধি পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, 'আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেশের মধ্যে সবচেয়ে মানবিক। একটা মানবিক মুখ হিসেবে সরকারের পক্ষে যা করা উচিত, আমরা সেটাই করেছি।'
এক কথায় বলা যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা আশাব্যঞ্জক ৷ মানবিকতার দাবি অবশ্যই রেখেছেন। মায়ানমার সংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রাস্তার দু'পাশে নিরাশ্রয় মানুষ অস্থায়ী শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন। এরা পড়শী মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে থেকে পালিয়ে আসা সহায়–সম্বলহীন মানুষ। বেশিরভাগ নারী ও শিশু। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, শরণার্থীর সংখ্যা ৮০ লক্ষ।
খালি পায়ে দিনের পর দিন হাঁটতে হাঁটতে একাধিক ক্ষত, জ্বর, সর্দিতে আক্রান্ত শিশুদের চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। হামের টিকাকরণে স্বাস্থ্যকর্মীরা নেমেছেন। বালুখালী–১, বালুখালী, কুতুপালং, থাইংখালী এবং পালংখালীর শিবিরগুলিতে ত্রান বিলি করছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বি জি বি) ও পুলিশ। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্র্যামে মিলেছে পরিবার পিছু ২৫ কেজি চাল। এই কর্মসূচির এশিয়া মহাদেশের কর্তা সিলকে বুহর বলেন, 'শরনার্থী মহিলা, শিশুরা ভীষণভাবে অপুষ্টিজনিত রোগের শিকার। আমরা পুষ্টিকর খাবার ও বিস্কুট দিচ্ছি I'
কুতলাং শিবিরে লম্বা লাইন দিয়ে চাল নিচ্ছেন মহিলার। শরণার্থীদের অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে বাঁশ, পলিথিন দিয়ে। তবে পরিশ্রুত জল ও শৌচাগারের অভাব রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সরকারের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে ৷ প্রথমে খোলা রাস্তার ধারে যেসব রোহিঙ্গারা থাকছিলেন, তাদের বিভিন্ন শিবিরে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা এনজিও শিবিরে শৌচাগার, টিউবওয়েল বসাচ্ছে। গাড়ি করে পানীয় জল পাঠাচ্ছে। আরও বেশ কিছু দেশ ত্রাণ পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশের বেশকিছু পুজো কমিটি হিসাব কাটছাঁট করে ত্রান পাঠিয়েছে রোহিঙ্গাদের এইসব শিবিরে ৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, 'দেশের ১৬ কোটি মানুষ যদি ভাত কাপড়ে বাঁচতে পারেন, কয়েক লক্ষ শরণার্থীকেও আমরা ভাত জোগাতে পারব।' শরণার্থীদের সুস্থ রাখার যে লড়াই চালাচ্ছে সরকার, বাংলাদেশের মানুষ তাতে সামিল হয়েছেন ধর্ম–সম্প্রদায় নির্বিশেষে ৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন