Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

রোহিঙ্গা শরনার্থী কেন? (‌‌পর্ব-৬)‌

Why-Rohingya-refugees-Episode-6

রোহিঙ্গা শরনার্থী কেন? (‌‌পর্ব-৬)‌

অজয় মজুমদার

রোহিঙ্গা মৃত্যুর খবর করে রয়টার্স সেনাবাহিনীর তোপে পড়েছে। সেনাবাহিনীর ছোড়া শেলের আঘাতে দুই রোহিঙ্গা মহিলার মৃত্যু হয়েছে– এই খবরটি ছাপার জন্য সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের বিরুদ্ধে মামলা করল মায়ানমারের সেনা। আগেই সাংবাদিক বৈঠক করে তারা এই খবর নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে, এ বার একেবারে আইনি পদক্ষেপের পথে চলল তারা। প্রশাসনের প্রতিনিধি কিও থু জানিয়েছেন, রয়টার্স এবং রাখাইন প্রদেশের একটি শহরের জনপ্রতিনিধি মং জ্যানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে ৷ এই জনপ্রতিনিধি রয়টার্সকে জানিয়েছেন সেলিং-এ মহিলাদের মৃত্যুর কথা।

যে ৬৬ টি ধারায় (সম্মানহানি) মামলা করা হয়েছে, তাতে দু বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে ৷ সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক সরকার বিরোধীকে এই ধারায় জেলে যেতে হয়েছে সু-কি র দেশে। এক্ষেত্রে থু– এর বক্তব্য, তাঁদের দেশে রয়টার্স কিভাবে কাজ করে, কোথায় তাদের দপ্তর রয়েছে– সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ একইসঙ্গে পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে সংসদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ করার জন্য। ২৫ জানুয়ারি রয়টার্স এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ৪ ফেব্রুয়ারি সেনার তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে বলা হয়, '‌এই সংবাদ মিথ্যা। সেনার ছোড়া শেলে নয়, বিদ্রোহী রোহিঙ্গা গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লোকেদের হামলাতেই মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলাদের।' তার কয়েক সপ্তাহ পরে অবশেষে আইনি ব্যবস্থার পথে হাঁট‌লো মায়ানমার সেনা।

এর আগেও এই দেশে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর চলা নির্যাতন নিয়ে খবর করায় গ্রেপ্তার করেছিল রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে। যা নিয়ে গোটা বিশ্ব তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। এবার শুধু সাংবাদিক নয়, সরাসরি রয়টার্সের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ করতে চায় ইয়াঙ্গণ। বিষয়টিকে মায়ানমারের প্রেস কাউন্সিলেও তোলা হয়েছে ৷ প্রতিক্রিয়া এসেছে সংবাদ সংস্থার কাছ থেকেও। তাদের বক্তব্য, '‌ফৌজদারি মামলা করার কোনও কারণ অন্তত আমরা দেখতে পাচ্ছি না।' এ‌ই নিয়ে বেশি দূর এগোনোর আগে তারা প্রেস কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত দেখে নিতে চাইছে। আর বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়া জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য, তিনি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। আইনি পথে চ্যালেঞ্জ এলে, মোকাবিলা করবেন।

ভারত সহ অন্য দেশ সমূহের ভূমিকার কথা একটু বলে নেওয়া ভালো। ভারতে এক লক্ষ কুড়ি হাজার তিব্বতি, ৬০ হাজার পাখতুন, ১০ হাজার সিংহলি শরণার্থী রয়েছেন। এর পাশাপাশি, ৩০ লক্ষ থেকে দু'কোটি বাংলাদেশিও ঢুকে পড়েছে বলে বিভিন্ন সংস্থার দাবি। কেন্দ্রীয় সরকার কখনও এদের নিয়ে বিশেষ অবস্থান নেয়নি। অথচ মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপরে অবর্ণনীয় অত্যাচার ও নির্বিচারে হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে, বহুদেশ নিন্দা জানিয়েছে। স্পষ্ট করেছে তাদের অবস্থান। তবে ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, 'সব রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুই  অনুপ্রবেশকারী ৷ তাদের সকলকে ফেরত পাঠাতে হবে।'‌ এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। 

তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের বক্তব্যকে আমলই দেয়নি ভারতের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী রিজেন্দু। তিনি বলেছেন, 'গোটা বিশ্বের মধ্যে ভারতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক উদ্বাস্তুর বাস। অতএব উদ্বাস্তু সমস্যা সামলানোর বিষয়টি নিয়ে আমাদের জ্ঞান দেওয়ার দরকার নেই‌।'‌ 'অ্যাক্ট ইস্ট' প্রকল্পে মায়ানমারকে আরও বেশি সামিল করার দিকে জোর দিতে চান  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু সেই উদ্যোগে কিছুটা হলেও ছায়া ফেলেছে ক্রমশ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠা রোহিঙ্গা সমস্যা। ভারত–মায়ানমার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু নিয়ে ভুগতে হচ্ছে ভারতকেও।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন