রোহিঙ্গারা শরনার্থী কেন ? (পর্ব-১৩)
অজয় মজুমদার
রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আস্তেনিও গুতেরেস ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকর রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে সম্প্রতি সু-চি প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইপ এর্দোগান ও সু-চি প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। এর্দোগান বসনিয়া ও রোয়ান্ডায় গণহত্যার প্রসঙ্গ টেনে নিউ ইয়ার্কে বলেছেন মায়ানমারের এই সহনীয় পরিস্থিতি না পাল্টালে মানবতার ইতিহাসের একটি কালো ছাপ পড়বে।
বাংলাদেশে যে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা রয়েছেন, তাদের অবিলম্বে মায়ানমারে ফেরার ব্যবস্থা করা হোক, এর্দোগান এই দাবি করেন ৷ সু চির ওপর চাপ বাড়ালেও সবকিছু তাঁর হাতে নেই ৷ পরিস্থিতি খানিকটা লাগামছাড়া হয়ে গিয়েছে। অর্ধশতক ধরে নির্বাচিত সরকার থাকতেও সেনাবাহিনী ক্ষমতার ভারকেন্দ্র, জন নেত্রীর সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনও ক্ষমতা নেই ৷
হার্বাট বিশ্ববিদ্যালয়ে বছর তিনেক আগে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের স্লো-জেনোসাইট বা মন্থর গণহত্যা করা হচ্ছে ৷ তখনও সু-চি কারাগারে বন্দি, বিরোধী দলের নেত্রী। তিনি তখনও ক্ষমতায় আসেননি ৷ রোহিঙ্গা সমস্যা প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, 'গণহত্যা তো চলছেই, কিন্তু তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলছে নানা ধরনের বঞ্চনা। বাসস্থান না পাওয়ার বঞ্চনা, খাবার না পাওয়ার বঞ্চনা, চিকিৎসা না পাওয়ার বঞ্চনা। সবকিছুর উপরে প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকার বঞ্চনা।'
সেই মন্থর হত্যালীলা আপাতত থামার কোনও লক্ষণ নেই, কোনও দিশা দেখাতে পারছেন না বিশ্বনেতারা। দেখাতে পারছেন না শান্তির নোবেল পুরস্কারজয়ী আং-সান সু-চি ৷ রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে শেষ পর্যন্ত মায়ানমার ও বাংলাদেশের সফরে এসেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস ৷ দুই দেশের প্রধানদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলেন ৷
রোহিঙ্গা নিয়ে ভার্টিকান সিটি সরব। ২৬ নভেম্বর ২০১৯ পোপ ফ্রান্সিস মায়ানমারে পৌঁছান। প্রথম বৈঠক করেন মায়ানমারের প্রধান আং-সান সু-চির সঙ্গে। সেখান থেকে এলেন বাংলাদেশে পয়লা ডিসেম্বর ২০১৯ ৷ বাংলাদেশের আর্চ বিশপের বাড়িতে বৈঠক করেন সব ধর্মের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। পোপের সফরের আগেই সামনে চলে আসে নয়া রিপোর্ট ৷
সেই রিপোর্টে বলা হয়, ২৫ অগষ্ট ১৭ সেনা ছাউনিতে রোহিঙ্গাদের উপর হামলার অনেক আগেই রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের ফাইনাল মিশন শুরু হয়েছিল। তার মধ্যে ছিল শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন চালানোর মতো পাশবিক কাজও ৷ এই রিপোর্ট তৈরি করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের মায়ানমার শাখা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন