সমকালীন প্রতিবেদন : এ যেন ঘরের ছেলের ঘরে ফেরা। হয়তো এতোদিন এমন দিনের অপেক্ষায় ছিলেন বনগাঁয় একটা বড় অংশের মানুষ। বুধবার বিকেলের জনসমুদ্র তারই ইঙ্গিত দিল। জনজোয়ারে ভাসিয়ে বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে বরণ করে নিলেন বনগাঁর মানুষ।
পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা। শাসক দলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তৃণমূল স্তর থেকে লড়াই করে একাধিকবার সাফল্যের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি হওয়া বিশ্বজিৎ দাস রাজ্যের শেষ বিধানসভা নির্বাচনেও প্রমান করে দিয়েছেন, সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের সমর্থন তাঁর সঙ্গে আছে। তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকে এই দলের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে জড়িয়ে থাকা বিশ্বজিতের সঙ্গে আগাগোড়াই স্নেহের সম্পর্ক দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা ব্যানার্জীর। দলের বনগাঁর নেতা মানেই দিদির কাছে পছন্দের তালিকায় অন্যতম নাম বিশ্বজিৎ।
দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মনোমালিন্যের কারণে যখন বিরোধীতার মাত্রা বাড়তে থাকছিল, দলের উচ্চ নেতৃত্বকে বুঝিয়েও যখন সুরাহা হচ্ছিল না, তখন বাধ্য হয়ে অন্য ভাবনা ভাবতে হয়েছিল তাঁকে। আর তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রাণের দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদার করতে হয়েছিল। তখন মনে মনে যথেষ্ট কষ্ট পেতে হয়েছিল বিশ্বজিৎ দাসকে। নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে সেই কষ্টের কথা বলেও ফেলেন।
অন্য দলে গিয়ে স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারলেও নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব প্রমান করতে দাঁতে দাঁত কামড়ে পরেছিলেন। সেখানেও তাঁকে কম বিরোধীতার সম্মুখীন হতে হয় নি। আজীবন বনগাঁ অঞ্চলে রাজনীতি করা বিশ্বজিৎকে একপ্রকার কোনঠাসা করতে বিধানসভা নির্বাচনে বাগদা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয় তাঁকে। তখন অনেকেই মনে করেছিলেন, এবার বিশ্বজিতের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ।
সেই ভাবনাকে মিথ্যা প্রমান করে নিজের রাজনৈতিক দক্ষতায় সফলভাবে জয়ী হলেন তিনি। অন্য দলের বিধায়ক হয়েও মন যেন পরেই ছিল পুরনো দল তৃণমূল কংগ্রেস তথা দলের নেত্রীর দিকেই। আর তাই হয়তো বিরোধী দলের বিধায়ক হিসেবে বিধানসভায় গিয়ে সটান প্রনাম ঠুকে দেন মমতা ব্যানার্জীর পায়ে। বিশ্বজিৎবাবু এটাকে রাজনৈতিক সৌজন্য হিসেবে ব্যাখা করলেও তখন থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়।
এরপর তাঁর প্রতিটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ এই জল্পনাকে দিন দিন আরও উস্কে দিতে থাকে। অবশেষে সব জল্পনার শেষ হয় মঙ্গলবার। ততদিনে অবশ্য বনগাঁ তথা জেলার রাজনীতিতে অনেক পট পরিবর্তন হয়েছে। আর এই দিনটির জন্যই হয়তো এতোদিন মনের ভেতরের কষ্টকে চাপা দিয়ে অপেক্ষা করছিলেন বিশ্বজিৎ দাস।
মঙ্গলবার তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে দলের পতাকা তুলে নিয়ে ফের পুরনো দলে ফিরে সাংবাদিকদেক মুখোমুখি হলেন, তখন মনের ভেতরের কথা কিছুটা বেরিয়ে এলো। ছেড়ে আসা দল সম্পর্কে বললেন, ওই দলে কাজ করা যাচ্ছিল না। আসলে তিনি মানসিকভাবে সেখানে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। পরিস্থিতির শিকার হয়ে কেবলমাত্র যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
বুধবার বিকেলে বনগাঁয় পা রাখতেই জনজোয়ারে বিশ্বজিৎ দাসকে বরণ করে নিলেন বনগাঁর তৃণমূল কর্মীরা। এদিন বনগাঁর ১ নম্বর রেলগেটে তাঁকে মালা পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর যশোর রোড ধরে ব্যান্ডের তালে তালে মিছিল করে দলীয় নেতা, কর্মীদের সঙ্গে পায়ে হেঁটে মতিগঞ্জে পৌঁছান বিশ্বজিৎ। সেখানে তাঁকে সম্বর্ধনার আয়োজন করেন বনগাঁ শহর তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি শঙ্কর আঢ্য। আলিঙ্গনে স্বাগত জানান শঙ্কর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন