অবিলম্বে স্কুল-কলেজ খোলা হোক
শুভঙ্কর সাহা
নয় নয় করে আজ দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ সারাদেশ জুড়ে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত কিছু উদ্যোগ চোখে পড়েছে। কিন্তু তাও দীর্ঘমেয়াদি কিছু হয়নি। আমাদের রাজ্যেও এবছর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রায় দুমাস স্কুল খোলা ছিল। তারপর আবার সবই বন্ধ। সম্প্রতি একটি ইঙ্গিত পাওয়া গেল মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই, পুজোর পরে স্কুল-কলেজ খুলতে পারে।
স্কুল কলেজ খোলা নিয়ে অনেক কথা ইতিমধ্যে হয়েছে, বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন রকম মতামত দিচ্ছেন, এটাই স্বাভাবিক। করোনার এই আবহে স্কুল–কলেজ খুলতে গেলে ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষার কথা আমাদের ভাবতেই হবে, এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু চারপাশে তাকালে একটু খটকা লাগে বৈকি। বাজার, বাস, অটো, টোটো, ব্যাংক, পোস্ট অফিস– সবকিছুই দিব্যি চলছে। কখনও কখনও রাজনৈতিক মিটিং, মিছিল, সভাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অবশ্যই বর্তমানে অধিকাংশ মানুষই মাস্ক বিহীন। আর এখানেই প্রশ্ন জাগে, তাহলে স্কুল–কলেজ নয় কেন?
প্রতিষ্ঠান বন্ধ মানে কি ছেলে মেয়েরাও ঘরবন্দি? বর্তমানে ছবিটা কিন্তু তাই বলে না। তারা দিব্যি বাজারে যাচ্ছে, প্রাইভেট টিউশনে যাচ্ছে, খেলার মাঠে খেলছে। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় যে, তারা সকলে ঘরবন্দি। কিন্তু তাদের বাবা, কাকা, কাকিমা, দাদা, দিদি, তারাও কি ঘরবন্দি? নিশ্চয়ই না। রুটি–রুজির তাগিদে তাঁরা প্রত্যেকেই বাইরে বের হচ্ছেন বা বলা ভালো বের হতে বাধ্য হচ্ছেন। তাহলে বাড়ির বাচ্চাদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বাড়ির অভিভাবকদের কাছ থেকেই।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই তার ছেলেমেয়েদের জন্য বিকল্প হিসাবে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু অর্ধেক ছেলেমেয়েও কি সেই সুবিধাটা নিতে পারছে ? এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের হিসাব বলছে, আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ আছে, এমন জনসংখ্যা ৬২ কোটির একটু বেশি। সোজা হিসাবে ধরলে, অর্ধেক পরিবারেও ইন্টারনেট সংযোগ নেই। যাদের আছে, তারাও কি সময়মতো রিচার্জ করবার পয়সাটা জোগাড় করতে পারেন? বাবা বা দাদা কাজে বেরিয়ে গেলে বাড়ির বাচ্চাটি ক্লাসের সময় কাঙ্খিত মোবাইলটি আর পায়না।
ফলে নতুন ধরনের এক বৈষম্য বাড়ছে আমাদের সমাজে। সর্বোপরি অনলাইন ক্লাস শ্রেণিকক্ষের পাঠের সমকক্ষ কখনোই হতে পারেনা। পাশাপাশি, ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে, অনেকেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনার বাইরে থাকতে থাকতে এক শ্রেণীর ছেলেমেয়েরা একেবারেই হয়তো হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই আশা করব, খুব তাড়াতাড়ি স্কুল কলেজ খুলবে। ছেলেমেয়েদের কলকাকলিতে ভরে উঠবে তাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন