সমকালীন প্রতিবেদন : কৃষ্ণ ধর্মের প্রচারক তথা ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদের আজ ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী। এই উপলক্ষে ১২৫ টাকার রূপোর স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ওই মুদ্রা প্রকাশ করার কথা। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, করোনা বিধির কথা মাথায় রেখে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান হবে। ভার্চুয়ালি ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ইসকনের সদস্যরা। অন্তত ৬০ টি দেশের কৃষ্ণভক্ত ও অনুরাগীরা সাক্ষী থাকবেন ওই অনুষ্ঠানের। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমাবেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ১৮৯৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মগুরু এবং হরেকৃষ্ণ আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা। ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীর শিষ্য ছিলেন প্রভুপাদ। হিন্দুধর্মের গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদ গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়াই তাঁর লক্ষ্য ছিল। স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। প্রভুপাদ বিবাহিত ছিলেন এবং তাঁর সন্তানাদিও ছিল। ১৯৫৯ সালে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। তখন থেকেই তিনি বৈষ্ণব শাস্ত্রের ভাষ্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৬০-এর দশকে পরিব্রাজক সন্ন্যাসী হিসেবে যাত্রা করেন আমেরিকায়। তাঁর আধ্যাত্মিক মতাদর্শ প্রচার করতে থাকেন। ১৯৬৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জন্মাষ্টমীর পরের দিন তিনি পাশ্চাত্যে প্রথম দীক্ষা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ১১ জনকে দীক্ষা দেন।
১৯৬৭ সালের ৯ জুলাই সানফ্রান্সিসকো শহরের রাজপথে তিনি প্রথম পাশ্চাত্যে রথযাত্রা পরিচালনা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি ভ্রমণ করেছেন। জানা যায়, গোটা বিশ্ব তিনি ১৪ বার ভ্রমণ করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে দেহ রাখেন। ইসকনের শিলিগুড়ি শাখার প্রচার সচিব নামকৃষ্ণ দাস জানিয়েছেন, ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর ছিলেন ভক্তিমার্গের বিগদ্ধ পণ্ডিত। তিনি ৬৪ টি গৌড়ীয় মঠের প্রতিষ্ঠাতা। বুদ্ধিদীপ্ত, তেজস্বী ও শিক্ষিত প্রভুপাদকে তিনিই বৈদিক জ্ঞান প্রচারের কাজে জীবন উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। শ্রীল প্রভুপাদ এগারো বছর ধরে তাঁর আনুগত্যে বৈদিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে ১৯৩৩ সালে এলাহাবাদে তাঁর কাছে দীক্ষাপ্রাপ্ত হন। তবে ১৯২২ সালেই শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর শ্রীল প্রভুপাদকে ইংরেজি ভাষায় বৈদিক জ্ঞান প্রচারের নির্দেশ দেন। পরবর্তী সময়ে শ্রীল প্রভুপাদ ভাগবত গীতার ভাষ্য লিখে গৌড়ীয় মঠের প্রচারের কাজে সহায়তা করেছিলেন।
১৯৪৪ সালে তিনি এককভাবে একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন। এমনকী নিজের হাতে পত্রিকাটি বিতরণও করতেন। সেই পত্রিকাটি এখন সারা পৃথিবীতে তাঁর শিষ্যবৃন্দ কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত হচ্ছে। ১৯৪৭ সালে শ্রীল প্রভুপাদের দার্শনিক জ্ঞান ও ভক্তির উৎকর্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ তাঁকে ভক্তিবেদান্ত উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৫০ সালে ৫৪ বছর বয়সে তিনি সংসার জীবন থেকে অবসর নেন। এর চার বছর পর বানপ্রস্থ জীবন গ্রহণ করেন। পুরোপুরিভাবে মনোনিবেশ করেন শাস্ত্র অধ্যয়ন, প্রচার ও গ্রন্থ রচনার কাজে। তিনি বৃন্দাবনে শ্রীশ্রী রাধা-দামোদর মন্দিরে বাস করতে থাকেন। তাঁর জীবনযাপন ছিল অতি সাধারণ। ১৯৫৯ সালে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। শ্রীশ্রী রাধা-দামোদর মন্দিরেই শ্রীল প্রভুপাদের শ্রেষ্ঠ অবদানের সূত্রপাত হয়। এখানে বসেই তিনি শ্রীমদ্ভাগবতের ভাষ্য ও তাৎপর্য সহ ১৮ হাজার শ্লোকের অনুবাদ করেন। রচনা করেন 'অন্য লোকে সুগম যাত্রা' নামক গ্রন্থ।
১৯৬৫ সালে ৭০ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ কপর্দকহীন অবস্থায় আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে পৌঁছন। প্রায় এক বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমের পর তিনি ১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সঙ্ঘ। তাঁর নির্দেশনায় এক দশকের মধ্যে বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠে শতাধিক আশ্রম, বিদ্যালয়, মন্দির ও পল্লি-আশ্রম। ১৯৭৪ সালে শ্রীল প্রভুপাদ পশ্চিম ভার্জিনিয়ার পার্বত্য ভূমিতে গড়ে তোলেন নব বৃন্দাবন। যা হল বৈদিক সমাজের প্রতীক। পরবর্তীতে তাঁর শিষ্যবৃন্দ ইউরোপ ও আমেরিকায় আরও অনেক পল্লি-আশ্রম গড়ে তোলেন।
শ্রীল প্রভুপাদের অনবদ্য অবদান হল তাঁর গ্রন্থাবলী। তাঁর রচনাশৈলী গাম্ভীর্যপূর্ণ ও প্রাঞ্জল এবং শাস্ত্র অনুমোদিত। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গ্রন্থ প্রকাশনী সংস্থা ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট। শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের সপ্তদশ খণ্ডের তাৎপর্য সহ ইংরেজি অনুবাদ মাত্র আঠারো মাসেই শেষ করেছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি মায়াপুরে সংস্থার মূল কেন্দ্র স্থাপন করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন