শম্পা গুপ্ত : প্রেমিকের সহযোগিতায় নিজের ৩ বছরের শিশু সন্তানকে সূচ ফুটিয়ে তিলে তিলে খুন করার ঘটনায় মা ও তার প্রেমিককে ফাঁসির সাজা দিল আদালত। বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা ঘটনা হিসেবে এই ঘটনাটিকে চিহ্নিত করে মঙ্গলবার এই রায় শুনিয়েছেন পুরুলিয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত ২ এর বিচারক রমেশ কুমার প্রধান। খুনের মামলার এই চুড়ান্ত রায় ঘোষনার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পরেছে।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে পুরুলিয়ার মফ:স্বল থানার নদিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা স্বামী পরিত্যক্তা মঙ্গলা গোস্বামীর ৩ বছরের শিশু সন্তান অসুস্থ হয়ে পরে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক পরীক্ষায় দেখা যায়, শিশুটির নিম্নাঙ্গে সাতটি সূঁচ ঢোকানো। এমন কান্ডে অবাক হয়ে যান চিকিৎসকেরা।
এরপর শিশুটিকে প্রথমে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ এবং পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকদিন সেখানে চিকিৎসা চলার পর ২১ জুলাই শিশুটির মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় শিশুটির মা মঙ্গলা গোস্বামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই সময় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, মঙ্গলার সঙ্গে ওই গ্রামের ওঝা সনাতন গোস্বামীর বিবাহ বহি:ভূত সম্পর্ক আছে। প্রেমিক সনাতনের পরামর্শে এবং সহযোগিতায় পথের কাটা নিজের শিশু সন্তানকে সূচ ফুটিয়ে তিলে তিলে খুন করে মা মঙ্গলা। এই ঘটনার পর পুলিশ মঙ্গলাকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও সনাতন এলাকা ছেড়ে পালায়। পরে পুলিশ তাকে উত্তর প্রদেশ থেকে গ্রেপ্তার করে আনে। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২, ১২০ বি এবং ৩৪ ধারায় মামলা শুরু হয়।
মামলা দায়েরের ৫৮ দিনের মাথায় পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়। ওই বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে মামলার শুনানী শুরু হয়। মোট ৪৪ জন সাক্ষী দেন। এই মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী আনোয়ার আলি আনসারি জানান, প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে মামলা চলার পর অবশেষে শুক্রবার মঙ্গলা এবং সনাতনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক।
এই ঘটনাকে বিরলতম ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে দোষীদের চরম শাস্তির দাবি করেন সরকার পক্ষের আইনজীবী। অবশেষে মঙ্গলবার বিচারক রমেশকুমার প্রধান মঙ্গলা এবং সনাতনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। বিচারকের আদেশ শোনার পর আদালত কক্ষে কান্নায় ভেঙে পরে মঙ্গলা। সে দাবি করে যে, সে নির্দোষ। যদিও আর এক দোষী সনাতন নির্লিপ্তই ছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন