সমকালীন প্রতিবেদন : বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জেলার সাধারণ সম্পাদককে 'সমাজবিরোধী', 'দুর্নীতিবাজ' বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ্যে মন্তব্য করলেন। আর এই মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে বনগাঁর রাজনৈতিক মহলে। সমালোচনা করতে ছাড়েনি তৃণমূলও। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে চলে এলো।
বৃহস্পতিবার রাতে বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকে বনগাঁয় সম্বর্ধনা দেওয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বিজেপির পক্ষ থেকে। এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মন্ডল। বনগাঁর মতিগঞ্জ এলাকায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এমনই একটি অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন না বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনস্পতি দেব, সহ-সভাপতি জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ সহ একাধিক মন্ডল সভাপতি।
এই প্রসঙ্গে জেলা সভাপতি মনস্পতি দেবকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জেলার সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মন্ডল কে সরাসরি 'দুর্নীতিবাজ, সমাজবিরোধী' বলে আখ্যায়িত করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, 'এমন একটি অসৎ লোককে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ দিতে চাইনি। সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের চাপে পড়ে তাঁকে ওই পদে রাখা হয়েছে। এদিনের অনুষ্ঠানটি তাঁর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান ছিল। রাজ্য থেকে এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমাদেরকে কিছু জানানো হয়নি। শুভেন্দু অধিকারী আসছেন, তাও আমরা জানতাম না। দলের জেলা কমিটির ২১ জন সদস্যের মধ্যে ১৯ জনই এই কর্মসূচি সম্পর্কে কিছু জানতাম না। আর তাছাড়া এইরকম একজন দুর্নীতিগ্রস্ত দলীয় নেতার অনুষ্ঠানে যাওয়াটা উচিত নয় বলে মনে করি।'
এদিন দেবদাস মন্ডলকে উদ্দেশ্য করে তিনি আর ও বলেন, ইতিমধ্যেই ১১ বার দল বিরোধী কাজ করার জন্য ওই ব্যক্তিকে শোকজ করা হয়েছে। কিন্তু তার উত্তর এখনও পর্যন্ত তিনি দেননি।' দলের সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশ্যে সরাসরি এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করার পাশাপাশি নিজের ফেসবুকে বেশকিছু ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন মনস্পতি দেব। সেখানে তিনি লিখেছেন, 'বনগাঁবাসী কী আগামী পৌর নির্বাচনে লাল চুল সোনাধারী ক্রিমিনালের দাসত্ব করতে চান ?' 'মার্ডার কেস রি ওপেন। আগাম জামিনে আছে। এবার কি খেলা হবে ?' 'স্মাগলার টি আজ সর্বভারতীয় সম্পদ।' 'স্মাগলার এর কাঁধে হাত ব্ল্যাক মেইলারের।'
সংবাদমাধ্যমের কাছে সরাসরি বিস্ফোরক মন্তব্যের পাশাপাশি ফেসবুকে কাকে তিনি ক্রিমিনাল, আর কাকে তিনি ব্ল্যাক মেইলার বলে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ছড়িয়ে দিয়েছেন, তাই নিয়েই তোলপাড় শুরু হয়েছে বনগাঁর রাজনৈতিক মহলে।
এই ঘটনাকে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল এর ফল বলে মন্তব্য করছে রাজনৈতিক মহল। দলের জেলার সহ-সভাপতি জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ নিজেই এই গোষ্ঠী কোন্দলের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, 'জেলা কমিটি আর অন্যদের মধ্যে দেবদাস মন্ডলই এই গোষ্ঠী কোন্দল তৈরি করছেন। তাঁর নানা আচরণে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসছে।'এ ব্যাপারে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা নেতা গোপাল শেঠ বলেন, 'বিজেপি দলটি যে আস্তে আস্তে ভেঙে যাচ্ছে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ। এই দলটি সমর্থক সংকটে ভুগছে। সমর্থক, কর্মীরা আর দলে থাকতে চাইছেন না। বিজেপির এখনকার যে নেতা একসময় তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থেকে জননেতা হয়ে উঠেছিলেন, এখন তিনি বিজেপিতে গিয়ে তাঁর সভায় ৫০ জন লোকও হচ্ছে না।'
যদিও দলের জেলা সভাপতি মনস্পতি দেবের এই বিস্ফোরক মন্তব্যের প্রেক্ষীতে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চান নি দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মন্ডল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন