হুংচুরা তেরেসা দ্বীপের বাসিন্দা
(দ্বিতীয় পর্ব)
অজয় মজুমদার
সামান্য কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও এঁদের মধ্যে আছেন ৷ কিন্তু কি অদ্ভুত বিষয়, হিন্দুধর্ম হুংচুদের মধ্যে পৌঁছতে পারেনি ৷ অথচ বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বি শ্রমিক দিনের পর দিন সেখানে কাজ করে চলেছেন ৷ দ্বীপের প্রধানকে বলে ক্যাপ্টেন ৷ ক্যাপ্টেনই হল এক একটা দ্বীপের রাজা ৷ ক্যাপ্টেনকে সকলেই খুব মান্য করেন। কোনও রাজনৈতিক দল সেখানে পৌঁছতে পারেনি ৷ সেইজন্য সেখানে কোনও রাজনৈতিক ভূমিকা নেই ।
দ্বীপের মানুষের মধ্যে বুদ্ধিমান, প্রভাববিস্তারকারী এবং শক্তসামর্থ্য হুংচুই ক্যাপ্টেন হন ৷ ক্যাপ্টেন অনেকটাই বিবেকবান ৷ দ্বীপগুলির ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে বিশেষ কোনও বিরূপ মন্তব্য শুনতে পাওয়া যায় না ৷ তবে এই দ্বীপগুলি রিলিফের সাহায্যে চলে ৷ বর্তমানে অবশ্য কিছু কিছু চাষও হচ্ছে ৷ চাষের উল্লেখযোগ্য ফসল হল– কলা ও মানকচু ৷ পশুপালনের মধ্যে কুকুর ও শূকর উল্লেখযোগ্য ৷
সুনামির পর অর্থনৈতিকভাবে হুংচু জীবন বেশ খানিকটা পুষ্ট হয়েছে ৷ কারণ, সরকার অনেক বেশি নজরদারি করছে ৷ তেরেসা দ্বীপের মধ্যে চোখমাছি স্থানে হুংচুরা বেশ ভদ্র। এখানে প্রাইমারি স্কুল ও হাইস্কুল আছে। ইন্টারটেরেসা জায়গাতেও বেশ ভদ্র–সভ্য মানুষের বসবাস ৷ এঁরা ভীষণ ভালো খেলাধুলা করেন ৷
হুংচু জীবনে চার্চের প্রভাব ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ৷ কোনও কোনও দ্বীপে চার্চের প্রভাবশালী ব্যক্তিই ক্যাপ্টেন হন। এই নির্বাচন খানিকটা চার্জের ওপরেই নির্ভর করে ৷ আসলে চার্চ হল একটি সংগঠিত সংস্থা ৷ আফ্রিকার জাম্বিয়াতেও দেখেছি চার্চের প্রভাব ৷ সেখানে ১৫ টি খ্রিস্টান দল ছিল ৷
যে দলের সংখ্যা বেশি, তারাই রাজনৈতিক ক্ষমতা ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী ৷ আবার উঁচু জাত হিসেবে তাঁরাই চিহ্নিত হয়ে যায় ৷ অবশ্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিপূর্ণতা এসে যায় ৷ সেইজন্য অন্যদের থেকে এই গ্রুপগুলি পৃথক হয়ে যায় ৷ সমাজের সকলেই যারজন্য মান্য করে ৷ এই নিকোবর দ্বীপগুলিতে ক্যাপ্টেন সেইজন্য সামাজিক মান্যতা পান এবং তাঁর আত্মীয়রাও একইভাবে এই মান্যতার ভাগিদার হন ৷
ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে রেশন ও রিলিফ বিলি বন্টন হয় ৷ রিলিফের চাল, চিনি, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, দুধ (আমুল) বন্টন করা হয় ৷ এরজন্য কোনও পরিবারকে পয়সা দিতে হয়না ৷ কারণ হুংচুদের কাছে চাইলেই পাওয়া যায় ৷ চাইলে সবজি ও ১০–১২ কিলোগ্রাম আলু দিয়ে দেয়। বিয়ের ব্যাপারে হুংচুদের কোনও বাছবিচার নেই । নিজেদের ভাই–বোন ছাড়া সকলের সঙ্গেই বিয়ে হতে পারে ৷ বিয়েতে যৌতুক দেবে পাত্রীর বাড়ি থেকেই ৷ বিয়ের অনুষ্ঠান ও আচার বিধি চার্চেই সম্পন্ন হয় ৷ বিয়ের পর পাত্রকে পাত্রীর বাড়িতে থাকতে হয় ৷ক্যাপ্টেনের আত্মীয় স্বজনকে বলে বোনফিস বা আলবার্ট ৷ হুংচু সমাজের ছেলেরা ভীষণভাবে অলস প্রকৃতির ৷ সারাদিন তাড়ির নেশা করে শুয়ে থাকে । সেখানকার তাড়ি তৈরি হয় নারকেলের রস দিয়ে ৷ মেয়েরাই গাছ কেটে রস বের করেন ৷ বাগান থেকে কলার কাঁদি কেটে আনেন ৷ কলার চাষও মেয়েরাই করেন ৷ তবে কখনও কখনও ছেলে মেয়ে একসঙ্গে চাষ করেন ৷ ওখানকার মেয়েদের বলে আইলা ৷ আইলারা খাল থেকে কালো বেলে বা নুন্দি বেলে, তেরেসা বেলে মাছ ধরেন। হুংচু ভাষায় পিলোবাই বলে। সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত খালে প্রচুর পরিমাণে লাল জাতের বেলে মাছ পাওয়া যায় ৷ সারাদিনে যত মাছ ধরা পড়ে, তার বেশিরভাগই বিক্রি হয় না ৷ কারণ মাছ কিনবে কে ? বিক্রি না হওয়া মাছগুলি ওঁরা শুকিয়ে খান ৷ এই মাছ ভেজে যখন তখনই টিফিনের মতো চুড়মুড়িয়ে খাওয়ার অভ্যেস আছে ৷.....(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন