সমকালীন প্রতিবেদন : আফগানিস্তানে কাজে গিয়ে সেখানে আটকে পরা উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বাসিন্দা সুজয় দেবনাথের বাড়িতে গেলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের এক প্রতিনিধিদল। সঙ্গে পুলিশের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। তাঁরা সুজয়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বিস্তারিত বিবরণ নেন। বাকি আর কারা কারা সেখানে আটকে রয়েছেন, সে ব্যাপারেও খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, একটি ক্যাটারিং সংস্থার হয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট কুক হিসেবে ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর আফগানিস্থানে যান অশোনগরের এ জি কলোনীর বাসিন্দা সুজয় দেবনাথ। সেখানে আমেরিকার ন্যাটো বাহিনীর জওয়ানদের জন্য খাবার সরবরাহ করার দায়িত্ব ছিল তাঁদের মতো একদল ভারতীয়ের। করোনা পরিস্থিতির কারণে এরমধ্যে আর বাড়িতে আসা হয়ে ওঠে নি তাঁর। এবছরের জানুয়ারি মাসে বাড়ি আসার জন্য প্রস্তুতি নিলেও ফের লকডাউন জারি হওয়ায় বাড়ি আসার কর্মসূচি বাতিল হয়।
এরইমধ্যে আফগানিস্তানে শুরু হয়েছে তালিবানদের দৌরাত্ম। চারিদিকে এখন সেখানে আতঙ্কের পরিবেশ। এখন সেখানে প্রাণে বেঁচে থাকাটাই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। টিভিতে, সংবাদ মাধ্যমে সেই খবর জানতে পেরে আরও শিউরে উঠছেন সুজনের পরিবার। মোবাইলে কথা বলা এখন সম্ভব হচ্ছে না। কোনওরকমে মেসেজ আদানপ্রদান হচ্ছে।
আর তাতেই সুজয়ের বাড়ির লোকেরা জানতে পেরেছেন, এই মূহূর্তে সুজয়ের মতো উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আরও ৮ জন যুবক, যারা তাঁ মতো ক্যাটারিংয়ের কাজ নিয়ে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে কাবুল বিমান বন্দরের বিশেষ ঘরে আটকে রয়েছেন। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত সেই বিমানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় নি।
এদিকে, অশোকনগরের বাড়িতে আড়াই বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটছে সুজয়ের স্ত্রী সুস্মিতা মন্ডল দেবনাথের। ওই একই বাড়িতে রয়েছেন সুজয়ের বাবা, মা, বোন। তাঁদেরও একই মানসিক অবস্থা। তাঁরের সবার একটাই প্রার্থনা, ভারত সরকার কিম্বা পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুজয়কে যেন সুস্থ শরীরে যত দ্রুত সম্ভব বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা করে।
সুজয়ের বিষয়টি জানতে পেরে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর নির্দেশে রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ৩ জনের এক প্রতিনিধি দল হাবড়া এবং অশোকনগরের পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সুজয়ের বাড়িতে হাজির হন। সেখানে সুজয়ের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেই সময় আফগানিস্তান থেকে ভিডিও কলে সুজয়ের সঙ্গে কোনওরকমে কতা বলার সুযোগ হয় প্রতিনিধি দলের।
সুজয়ের মাধ্যমে তখনই তাঁরা জানতে পারেন যে, সুজয়ের মতো গোপালনগর, গোবরডাঙা, অশোকনগর, বারাসত সহ এই জেলার আরও ৮ জন সেখানে আটকে পরেছে। তাঁদের বিস্তারিত তথ্য সুজয়কে পাঠাতে বলা হয়। প্রতিনিধি দলের সদস্য মনোজ রায় জানান, 'সুজয় সহ বাকিদের তথ্য সংগ্রহ করে বনমন্ত্রীর মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে যাতে এই ব্যক্তিদের বাড়িতে ফেরানো সম্ভব হয়, তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন