Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১

রাবড়ি খেতে ভালবাসেন? জেনে নিন বাংলার কোথায় রাবড়ি গ্রাম!

  

Rabri-village-of-Bengal

সমকালীন প্রতিবেদন : ডায়াবেটিসের চোখ রাঙানি যতই থাকুক না কেন, বাঙালির শেষ পাতে মিষ্টি ছাড়া জমে না। আর সেই মিষ্টি যদি হয় রাবড়ি, তা হলে তো কোনও কথাই নেই। সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তী হয়তো রাবড়ির প্রেমে মজেছিলেন। তাই তিনি বলেছিলেন, পকেটে পয়সা থাকলেই রাবড়ি খাবেন।এই বাংলাতেই রয়েছে আস্ত একটি রাবড়ি গ্রাম। জানেন, সেটি কোথায়? তা হলে চলুন ঘুরে আসা যাক রাবড়ি গ্রামে। 

Rabri-village-of-Bengal

হুগলি জেলার চণ্ডীতলা ব্লকের আঁইয়া। কিন্তু গ্রামের পোশাকি নাম আর কেউ মনে রাখেননি। মানুষের মুখে মুখে হয়ে উঠেছে রাবড়ি গ্রাম। ডানকুনি থেকে বাসে গাংপুর নামার আগে কন্ডাক্টরকে বলে রাখলেই হবে। তিনিই দেখিয়ে দেবেন। তবু ঠিকানাটা আরও সোজা করে জানিয়ে রাখা যাক। 

কলকাতা থেকে ডানকুনি হয়ে অহল্যাবাই রোড ধরে মশাট বাজার। সেখান থেকে বাঁদিকে নেমে গিয়েছে একটি রাস্তা। ওই রাস্তা সোজা চলে যাচ্ছে হাওড়ার বড়গাছিয়া। সেই রাস্তাতেই পড়বে রাবড়ি গ্রাম। ঘরগুলির সামনে নিকোনো উঠোন। রয়েছে ধানের গোলা। শান্ত, সবুজ। ঠিক যেন আদর্শ গ্রামের ছবি। গোলা থেকে ছড়ানো ধান খুটে খাচ্ছে পায়রার দল। বকবকম...আওয়াজ করে। কোনও কোনও উঠোনে মেলা আছে মহিলাদের নরম সুতির শাড়ি। হলুদ লাল পেড়ে। দুপুরে মোটামুটি শান্ত চারদিক। কিন্তু কাকভোর থেকেই এই গ্রামে শুরু হয় ব্যস্ততা। তখন এই গ্রামের মানুষদের এক মুহুর্ত কথা বলার ফুরসৎ নেই। সেসময় কলকাতা থেকে আসা বিভিন্ন নামী মিষ্টির দোকানের গাড়ি সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তার ধারে। কড়াই থেকে নামতেই গরম গরম রাবড়ি নিয়ে সেসব গাড়ি চলে যায় নির্দিষ্ট ঠিকানায়।

রাবড়ি তৈরির কর্মযজ্ঞটা ঠিক কী রকম! 

তখন সবে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ড্রাম ভর্তি হয়ে আসছে দুধ। ঘরে ঘরে জ্বলে উঠছে উনুন। পাশে রাখা বিশালাকার কড়াই। সেই কড়াই বসানো হল চুলায়। তারপর ঢালা হল দুধ। শুরু হল দুধ ফোটানোর কাজ। দুধ ফুটে কখন ঘন হবে তার অপেক্ষা। একদিকে দুধ ফুটছে, অন্যদিকে, কারিগর সমানে হাত পাখা দিয়ে কড়াইয়ের ফুটন্ত দুধে হাওয়া দিয়ে চলেছেন। অনেক সময় বাড়ির মহিলারাও তালপাখা দিয়ে এই বাতাস দেওয়ার কাজটি করে থাকেন। হাতের বিরাম নেই। 

এভাবেই দুধের উপর মোটা সর পড়ে। কাঠের বিশেষ চামচ দিয়ে সেই সর কেটে কড়াইয়ের গায়ে লেপ্টে দেওয়া হয়। কড়াইয়ের তাপে সেই সর শুকিয়ে যায়। পরে তা তুলে রাখা হয় হাঁড়িতে। ডুবিয়ে রাখা হয় ক্ষীরে। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় রাবড়ি। কড়াইয়ে কতটা দুধ দেওয়া হবে, কতক্ষণ ফুটবে, সবকিছুর হিসেব আছে। সাধারণত একটা কড়াইয়ে সাত লিটার দুধ জ্বাল দেওয়া হয়। সেই দুধ ফুটে দেড় লিটার হয়। 

প্রবীণদের দেখে রাবড়ি তৈরির রেসিপিতে হাত পাকাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। অনেকে বেসরকারি কারখানা বা সংস্থায় কাজ করেন। ছুটির দিনে তাঁরাও বাড়ির অন্যদের সঙ্গে রাবড়ি তৈরির কাজে হাত লাগান।এই যে রাবড়ির এত প্রশংসা আর তৃপ্তি, তার নেপথ্যে এই আঁইয়া গ্রামের মানুষগুলোরই হাতযশ। প্রতিটি বাড়িতেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ক্লান্তিহীনভাবে রাবড়ি তৈরির কাজে মশগুল।গ্রামে সবমিলিয়ে প্রায় ৮০ টি পরিবার রাবড়ি তৈরি করে। প্রতিটি বাড়িতে কম করে ৮০ লিটার দুধ লাগে। 

করোনা পরিস্থিতিতে চাহিদা একটু কমেছে। তবে রাবড়ি তৈরিতে বিরাম নেই। গ্রাম থেকেই বেশিরভাগ দুধ সংগ্রহ হয়ে যায়। বাকিটা আসে আশপাশের এলাকা যেমন, জগৎবল্লভপুর, জাঙ্গিপাড়া থেকে।শহুরে কোলাহল থেকে অনেকটা দূরে নিজের ছন্দেই বেঁচে আছে আঁইয়া। নিজেদের অনেক দুঃখ-কষ্ট। কিন্তু সেসব বেশি বলতে চান না এই গ্রামের মানুষগুলো। ব্যবসায় ওঠাপড়া তো থাকবেই। তাঁরা শুধু চান, শহরের মানুষগুলো যেন ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা ক্ষীরটুকু চেটেপুটে নিতে পারে, এই দায় যেন রাবড়ি গ্রামের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন