Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২১

সুস্থ সমাজ গঠনে ব্যতিক্রমী ভূমিকায় এক সেবা প্রতিষ্ঠান

 

One-service-organization-in-an-exceptional-role

সমকালীন প্রতিবেদন : ‌শুরুটা হয়েছিল দুস্থ–মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সহযোগিতা করা এবং দুস্থ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে। গত ১৮ বছরে সেই কাজের পরিধি অনেকটাই বেড়ে গেছে। যুক্ত হয়েছে সুস্থ সমাজ গঠনে নানা উদ্যোগ। আর এভাবেই একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ থানার কালুপুরের উনাই নেতাজি সেবা প্রতিষ্ঠান। 

২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট কালুপুর পঞ্চায়েত এলাকার উনাই গ্রামে একটি ছোট্ট খাসজমিতে শিক্ষক বাসুদেব পালের নেতৃত্বে তাঁর মা রেনুকা দেবির প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে পথ চলা শুরু করে এই প্রতিষ্ঠান। আজ নানা চড়াই–উতরাই অতিক্রম করে সেবা প্রতিষ্ঠান আঠারোতে পা দিল। ২০০৬ সালের সংস্থার সরকারি নিবন্ধীকরণ সম্পন্ন হয়। রেনুকা দেবি তাঁর স্বামী ধীরেন্দ্রনাথ পালের থেকে প্রাপ্ত নিজের জমিটুকু সংস্থান নামে দান করেন। ২০০৬ সাল থেকেই পরিচালিত হয় 'ধীরেন্দ্রনাথ স্মৃতি পাঠাগার‌।' 

ওই বছর ২৩ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে সুস্বাস্থ্য, সুশিক্ষা ও সুসংস্কৃতির বাতাবরণে পালিত হয়ে চলেছে কালুপুর নেতাজি উৎসব। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয়েছে কালুপুর নাট্য উৎসব। ২০১৬ সাল থেকে নাট্য উৎসবে স্থান পেয়েছে বিদ্যালয়ভিত্তিক একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতা। ২০১৫ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠান শুরু করেছে নেতাজি ট্যালেন্ট সার্চ এক্সামিনেশন। বহু মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় ২০১১ সালে নির্মিত হয় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট চিকিৎসাকেন্দ্র। 

২০১৪ সালে সংস্থা কালুপুর বাজারে একটি জমি কিনে সেখানে স্থায়ী মঞ্চ নির্মান করে। গত বছর স্থায়ী মঞ্চকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয় স্থায়ী প্রেক্ষাগৃহ 'কালুপুর নেতাজি ভবন'‌। এপর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান দুই হাজারেরও বেশি দু:‌স্থ–মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে সহযোগিতা করেছে। যার মধ্যে অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁরাই আবার অন্যান্য দু:‌স্থ–মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সংস্থার মাধ্যমে বর্তমানে শতাধিক ছাত্রছাত্রী মাসিক স্কলারশিপ পাচ্ছে। 

অসংখ্য শিক্ষক ও অধ্যাপক সংস্থা থেকে পাঠানো ছাত্রছাত্রীদেরকে বিনা পারিশ্রমিকে পাঠদান করেছেন। দু হাজারেরও বেশি মানুষকে এর্যন্ত নতুন বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। ১০ হাজারেরও বেশি গাছের চারা রোপন কিংবা বিতরণ করা হয়েছে। আমপান বিধ্বস্ত সুন্দরবনে দুবার ত্রাণ সামগ্রী এবং বীজ ধান বিতরণ করা হয়েছে। ইয়াস বিধ্বস্ত সুন্দরবনে কমিউনিটি কিচেন পরিচালনা করা হয়েছে। সেখানে এক সপ্তাহ ধরে রান্না কাবারের পাশাপাশি শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। 

সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল নির্মাণের জন্য সংস্থায় নিয়মিত নাচ, গান, আবৃত্তি, অঙ্কন, তবলা, স্প্যানিশ গিটার, হাওয়াইয়ান গিটার, মাউথ অর্গান, সেতার, ভায়োলিন, বাঁশি ইত্যাদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত যোগব্যায়াম এবং ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে ফুটবল, ভলিবল এবং মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। পালিত হয় বিশ্ব যোগ দিবস। প্রতিষ্ঠানের মুখপত্র হিসেবে মাসিক পত্রিকা 'জনচেতনায় হিন্দোল'‌ নিয়মিত প্রকাশিত হয়। 

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার ওয়ার্কশপ যেমন বুজরুকি নয় বিজ্ঞান, প্রাথমিক চিকিৎসা, নাটক, মূকাভিনয় ইত্যাদি আয়োজন করা হয়। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নিয়মিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চোখ, দাঁত, হার্ট এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করা হয়। স্বল্পমূল্যে ইসিজি করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতলে রুপদান করার স্বপ্ন দেখেন প্রতিষ্ঠানের কর্তারা।‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন