সমকালীন প্রতিনেদন : ঘরে থেকে দমবন্ধ লাগছে ? প্রাণভরে একটু মুক্ত বাতাস টেনে নিতে চান ? করোনার চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে অন্তত দু-তিনটে দিন ঘুরে আসতে পারেন ঝালং, বিন্দু। শহরের কোলাহল থেকে বহুদূরে নিজেকে প্রকৃতির মাঝে বিলিয়ে দিতে এই জায়গা দু'টির জুড়ি মেলা ভার।
শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে ডুয়ার্সের নিউ মাল স্টেশনে নেমে গাড়ি রিজার্ভ করে নিতে হবে। মালবাজার থেকে ঝালং ৪৫ কিলোমিটার পথ। প্রকৃতি যেন এখানে তার অপার সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে। চালসা, গুমানি, গৌরিবাস হয়ে জঙ্গল পথে ঝালংয়ের উদ্দেশে এগিয়ে চলবে গাড়ি। চলার পথেই নজরে পড়বে আপনার পাশে পাশেই এঁকেবেঁকে তির তির করে বয়ে চলেছে জলঢাকা নদী। টলটলে নীল জল তার। পাহাড়িঝোরা ঝোলুং এসে মিশেছে রুপোলী ফিতের মতো দেখতে জলঢাকা নদীতে। যেন স্বপ্নের জগৎ। সারাদিন ধরে অবিরাম ঝর্ণার শব্দ। নদীর উপর ছোট্ট একটা ব্রিজ। পা দিলেই দুলে উঠবে। এজন্য অনেকে তাকে দোলনা ব্রিজ বলে থাকেন।
ঝালং-এ জলঢাকা হাইডেল পাওয়ার প্রজেক্ট রয়েছে। ১৯৫৫ সালে তৈরি। ঝালংয়ের রাত যেন আরও মায়াবী। ঝুপ করে সন্ধে নামে এখানে। অমনি শুরু হয়ে যায় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। জ্বলে ওঠে জোনাকিরা। দারুণ রোমাঞ্চকর পরিবেশ। আর আপনি যদি সেই রোমাঞ্চ চেটেপুটে উপভোগ করতে চান, অবশ্যই তার ব্যবস্থা রয়েছে। রাত কাটাতে পারেন নদীর পাড়ে তাঁবুতে।
পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের বেশ কয়েকটি তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। তবে বেসরকারি হোটেলও আছে। চাইলে সেখানেও থাকতে পারেন।প্রথমদিন ঝালংয়ে কাটিয়ে পরদিন ঘুরে আসা যেতে পারে ভুটান সীমান্তে। ভারতের শেষ জনপদ বিন্দু। ঝালং থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। পথে যেতে যেতে মনে হবে যেন কোনও এক ছবির গ্রামে এসে পড়েছেন আপনি।
পাহাড়ের ঢালে রংবেরঙের কাঠের বাড়ি। তার দেওয়ালে থরে থরে সাজানো ফুলের টব। আর সেইসব টবে ফুটে রয়েছে ফায়ারবল, পিটুনিয়া, গ্লাডিওলাস, অর্কিড ফুল। রাস্তার ধারে মাথা ঝুঁকিয়ে আপনাকে স্বাগত জানাবে কমলালেবু গাছ। বর্ষায় ঘন সবুজ জঙ্গল। চোখ ফেরাতে পারবেন না।
আকাশ পরিষ্কার থাকলে বরফে ঢাকা হিমালয়ের পর্বতশৃঙ্গ দেখা যায় এখান থেকে। বিন্দুতে জলঢাকা ব্যারেজের ওপারে ভুটান বাঁধের ওপর ওঠা যায়। তবে ছবি তোলা নিষেধ। হাটের দিন ভুটান থেকে লোকজন কেনাকাটা করতে আসেন বিন্দুতে। ঝালংয়ে বুধবার আর বিন্দুতে বৃহস্পতিবার হাট বসে। মুছে যায় ভৌগোলিক সীমারেখা। নদীর গা বেয়ে খাড়া উঠে গিয়েছে ভুটান পাহাড়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন ধূসর পাহাড়ের গায়ে লেপ্টে রয়েছে সবুজ বন।
অনেকে ঝালং থেকে দলগাঁও হয়ে রঙ্গো বেরিয়ে আসেন। ঘুরে আসা যায় কাছেই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম প্যারেন থেকে। প্যারেন হয়ে দেখে আসতে পারেন আর এক মন কেমন করা পাহাড়ি জনপদ তোদে। মোমো আর পাহাড়িয়াদের হাতে তৈরি নুডুলস সুপ থুকপার স্বাদ জিভে লেগে থাকবে আপনার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন