Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২১

হুংচুরা তেরেসা দ্বীপের বাসিন্দা


Hunchura-is-a-resident-of-Teresa-Island

হুংচুরা তেরেসা দ্বীপের বাসিন্দা

(‌তৃতীয় তথা শেষ পর্ব)‌

অজয় মজুমদার 

ছেলেদের তো তাড়ির সঙ্গে শুটকি মাছ ভাজা উপাদেয় খাদ্য। হুংচুদের মধ্যে বহির্বিবাহ সম্পর্ক ব্যাপকভাবে চলে ৷ এসব নিয়ে এই সমাজে তেমন কিছু সমালোচনা নেই ৷ এই সমাজের মেয়েরা খুবই স্বাবলম্বি ৷ মেয়েদের পৃথক ভলিবল টিম আছে ৷ যারা কলকাতার ভালো দলকেও হারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে ৷ যেটা নেই, সেটা হলো এদের প্রচার ৷ মেয়েরা লুঙ্গি, পরিপূর্ণ ব্লাউজ পরেন ৷ শরীরের কোনও স্থান মুক্ত থাকবে না ৷ তবে অদ্ভুত ব্যাপার হল– স্নান করার সময় হুংচুরা প্রায় সকলেই উপরের অংশ মুক্ত করে স্নান করেন। দশটি ছেলের সামনে এভাবে স্নান করতে এদের বিন্দুমাত্র সংকোচ হয় না ৷ এমনকি চোখমাছির ক্যাপ্টেনের মেয়ে চেন্নাইতে শিক্ষকতা করেন, তিনি ছুটিতে বাড়িতে এলেও ওই একইভাবে স্নান করতে তাঁর অসুবিধা হয় না। 

চোখমাছির মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য রয়েছেন একমাত্র লেডি ডাক্তার ৷ তিনি সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে তৈরি ডাক্তার ৷ তাঁর স্বামী একজন বেকার যুবক ৷ খ্রিস্টান মিশনারীরা বিভিন্ন দ্বীপেই তাঁদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে ফেলেছেন ৷ তবে এতে অনেক উপকারও হয়েছে জনগণের ৷ শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়িত হচ্ছে ৷ যারা লেখাপড়া করতে চান, তাঁরা পোর্টব্লেয়ারে এসে স্কুল, কলেজে পড়েন। এই পড়াশোনার ইচ্ছেটাই মিশনারীদের দান ৷ 

হুংচু জীবনে আনন্দ উৎসব চলে প্রতি সন্ধ্যায় ৷ প্রতিদিনই পৃথক পৃথক বাড়িতে তাড়ি খাবার পার্টি বসে। যার বাড়িতে পার্টি করবে– সেদিন সব খরচই তাঁর। নেশা করা ছাড়াও নাচ–গানের আসরও বসে ৷ গানের সঙ্গে কোনও মিউজিকের ব্যবহার নেই ৷ আসলে এই অলস মানুষদের অনুশীলন করা অর্থাৎ নির্দিষ্ট গণ্ডির কোনও কিছুর মধ্যেই থাকতে চান না। গানও নিজস্ব নয় ৷ তবে গায়কী অবশ্যই নিজস্ব ৷ অনুষ্ঠানের সময় শুকর মেরে মোটা তরলা বাঁশের উপর শুকরের চার পা বেঁধে দোলাতে দোলাতে অনুষ্ঠানে স্থানে নিয়ে আসে ৷ নিয়ে আসার সময় ওঁরা প্রতিধ্বনী দেন– হাইয়া হো হো ৷ সঙ্গে সঙ্গে সকলেই একই প্রতিধ্বনি দেন ৷ এবার শুকরকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে আনেন ৷ গলায় নতুন কাপড় দিয়ে মালা তৈরি করে আনেন ৷ শুকর মারার আচার অনুষ্ঠানও মৌলিক দাবী রাখে ৷ 

সুনামিতে তেরেসার মৃতের সংখ্যা ছিল ২২ জন। তেরেসা দ্বীপে দেহ ব্যবসা চলে বেশ রমরমিয়ে ৷ বাইরে থেকে যাওয়া শ্রমিকরা এই যৌন হাতছানির কাছে পরাস্ত হয় ৷ এখানে গড়ে উঠেছে এক অলিখিত লালবাতি অঞ্চল ৷ ন্যাকোর (ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অরগানাইজেশন) কোনও পরিষেবা সেখানে পৌঁছায় নি। হুংচুরা আরো ক‌য়েকটি দ্বীপে ছড়িয়ে পড়েছেন ৷ যেমন ক্যাম্বেল, ব্লাক দ্বীপ– এই দ্বীপটি ইন্দোনেশিয়ার কাছাকাছি ৷ মাকাচুয়া দ্বীপ, পিলোপাঞ্জা দ্বীপ, সেখান থেকে আরও দু ঘণ্টা এগিয়ে পিলোবা দ্বীপ পড়ে। 

পিলোবা যাবার শেষ পয়েন্ট হল ইন্দিরা পয়েন্ট ৷ এখানে কিছু সেনা ছাউনি আছে। হুংচুরা সভ্যতার আলোকে আসতে চান না ৷ কারণ, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা নেই ৷ এছাড়াও, অলসতা চরিত্র তাঁদের সভ্য জগত থেকে অনেক দূরে রেখেছে। হুংচুরা নেশা নিয়ন্ত্রণে আনলে হয়তো অনেকটাই কর্মমুখী হবেন ৷ নিকোবরে যাওয়া–আসার অনুমতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেই। সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউই নিকোবর দ্বীপে যেতে পারেন না। সেইজন্য সভ্য সমাজের সঙ্গে নিকোবর সাংস্কৃতিক দূরত্ব আরও অনেকটাই বাড়ছে  ৷                          

*(সৌজন্য–গোবিন্দ মজুমদার,         

কার্পেন্টার, রেকন কোম্পানি)




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন