কে কে মল্লিক : ভালো কিছু করার ইচ্ছে, মনের জোর এবং দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করার মানসিকতাই লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে, সত্যি হতে পারে নিজের স্বপ্ন৷ বাঁশ ঝাড়ি বসির হাটের হাবিবুর রহমানের নাম ফুটবলার হিসাবে আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না৷ বাংলা ফুটবলে এক অনন্য নাম হাবিবুর রহমান৷
ফুটবলার হিসাবে সফল হওয়া খুব সহজ ছিল না তাঁর৷ উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের মতো জায়গা থেকে লড়াইটা চালাতে হয়েছে৷ বাবা শাকির আলি মন্ডলের ইচ্ছেও ছিল, ছেলেটা ফুটবলার হোক৷ স্কুলে পড়তে পড়তেই সুযোগ আসে সাই তে থেকে ফুটবলের তালিম নেওয়ার৷ আনন্দবাজার ফুটবল কাপের ফাইনালেই হাবিব চোখে পরে যান প্রাক্তন ফুটবলার অরুণ ঘোষের৷ সাই তে দুবছর থাকার পরই এক্কেবারে গন্তব্য হয় টাটা ফুটবল অ্যাকাদেমীতে৷ আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি বসিরহাটের ছেলেটিকে৷ চলতে থাকলো ফুটবলের এ থেকে জেড৷
টাটা ফুটবল অ্যাকাদেমীতে থেকেই নিজের জাত চেনালেন হাবিব৷ অনুর্দ্ধ ১৭ ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে উঠলো৷ সময়টা ২০০০ সাল৷ অনুর্দ্ধ ১৭ ভারতীয় ফুটবল দলের সদস্য হিসাবে পাড়ি দিলেন জার্মানী৷ সেই সময় ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন ইসমাইল আকমেলভ৷ জার্মানীর স্থানীয় দল হানিফকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল ভারতীয় দল৷ এরপর অনুর্দ্ধ ১৭ এবং ১৯ ভারতীয় দলের সঙ্গে সফর করলেন এবং নিজেকে মেলে ধরলেন থাইল্যান্ড থেকে আয়ারল্যান্ড, দুবাই এর মতো জায়গায় আন্তর্জাতিক ম্যাচে৷ মিড স্টপার হিসাবেই গড়ে তুললেন নিজেকে৷
এরপর ২০০২ সালে সুযোগ এসে গেল ভারতীয় সিনিয়র জাতীয় দলে খেলার৷ যে দলে সহকারি ফুটবলার হিসাবে পাশে পেলেন বাইচুং ভুটিয়া থেকে বিজয়ন, ভেঙ্কটেশ, দীপক মন্ডল, সংগ্রাম থেকে অ্যালভিটোদের৷ সফর করলেন কাতার থেকে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ওমান, কুয়েত এর মতো দেশে৷ যেন স্বপ্নপূরণ৷ এরপর কলতাকা ময়দানে হাবিবের প্রবেশ ঘটলো ২০০৪ সাল নাগাদ৷ প্রথমে সই করলেন মোহনবাগানে৷ সেই সময় মোহনবাগানের সুব্রত ভট্টাচার্য প্রশ্ন তুললেন ট্রায়াল দিয়ে মোহনবাগানে আসতে হবে৷ সন্মানে লাগে হাবিবের৷ এতো খেলার পরও ট্রায়াল দিতে হল তাঁকে৷
মাঠ থেকে অবসর নিলেও নিজেকে মেলে ধরলেন ছোটদের নিয়ে৷ বাগুইআটির জোড়া মন্দির নির্ভিক সংঘ কোচিং সেন্টারের দায়িত্ব নিলেন হাবিবুর৷ তাঁর কোচিং সেন্টার থেকে দুজন যুব ফুটবলার সুযোগ পেলেন বিদেশে প্রশিক্ষন নেওয়ার৷ থেমে নেই হাবিবুর৷ বসিরহাটের গ্রামের বাড়ি থেকে বাগুইআটিতে তৈরি করলেন নিজের আধুনিক বাড়ি৷ মা, বোন, ভাই এবং দাদা মেহবুব শাকিব এবং পরিবারে অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়েই চলছে হাবিবুরের পরিবার৷ তবে একটাই দু:খ, কলকাতায় নিজের বাড়িতে সবাইকে কাছে পেলেও তিনি বাবাকে নিজের তৈরি বাড়িতে রাখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন৷ আসলে বাবাকে ইতিমধ্যেই হারিয়ে ফেলেছেন হাবিবুর৷
খুব সংগ্রামের সাথে উনি নিজেকে এই উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি আরও ভালো ভালো ফুটবল প্লেয়ার তৈরি করুন এবং বাংলা তথা দেশের নাম উজ্জ্বল করুন এটাই কামনা। প্রতিবেদক কে ধন্যবাদ যে তিনি আমাদের এই রকম অনুপ্রেরণা মূলক প্রতিবেদন লিখেছে। অনেক ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুন