সমকালীন প্রতিবেদন : সাপে কাটা রোগীর মৃতদেহ মনসার থানে নিয়ে এসে ফেলতে পারলেই বাঁচিয়ে দেওয়া যাবে মৃত ওই মানুষকে। ওঝার কথায় বিশ্বাস করে হাসপাতালের মর্গ থেকে মৃতদেহ এনে মনসার থানে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন পরিবারের সদস্যরা। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানার দেহালদহ গ্রামের এক ওঝার এমনই দাবিতে চাঞ্চল্য ছড়ালো। প্রতিবাদে সরব হলো যুক্তিবাদী মঞ্চ।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বাগদা থানার সাগরপুর গ্রামের বাসিন্দা আয়না দাস (৪০) নামে এক গৃহবধূকে বাড়ির ভেতরেই সাপে কামড়ায়। বাড়ির লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর তাঁর দেহ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে, ওই গৃহবধূর মৃত্যুর কথা জানতে পেরে বাগদার দেয়ালদহ গ্রামের বাসিন্দা ভোলা সরদার নামে এক ওঝা দাবি করেন যে, সম্প্রতি তিনি মা মনসার স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন। তাতে তার দাবি, মায়ের স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী কোনও সাপে কাটা রোগীর মৃতদেহ মা মনসার থানে নিয়ে এসে ফেলতে পারলেই তাঁর জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবেন ওই ওঝা। যদিও এর আগে তিনি একজনকেও এভাবে বাঁচানোর ঘটনা ঘটাতে পারেন নি।
পরিবারের সদস্যের মৃত্যুতে বিহ্বল ওই গৃহবধূর স্বামী নিমাই দাসের এ ব্যাপারে বক্তব্য, 'ওই ওঝা যখন বলেছেন যে আমার মৃত স্ত্রীকে বাঁচিয়ে দিতে পারবেন, তাই তার কথায় ভরসা করে আমরা মৃত আয়নার দেহ মর্গ থেকে এনে ওই ওঝার মনসার থানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
এদিকে, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সরব হয়েছে যুক্তিবাদী মঞ্চ। সংগঠনের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি সজল ভদ্র জানান, 'এটা সম্পূর্ণ এক বুজরুকি। কুসংস্কারকে সঙ্গী করে এভাবেই গ্রামের এক শ্রেণীর মানুষ ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষের বোঝা উচিত, একবার কেউ মারা গেলে তাঁকে আর কোনভাবেই বাঁচিয়ে তোলা যায় না।'
এই ধরনের বুজরুকির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। যুক্তিবাদী মঞ্চের আরও দাবি, অবিলম্বে কুসংস্কার বিরোধী বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ছাত্রাবস্থাতেই কুসংস্কারের ব্যাপারে সচেতন করে তোলা হোক ছাত্রছাত্রীদেরকে। আর তাহলেই কুসংস্কারমুক্ত হবে সমাজ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন