জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বনগাঁ কংগ্রেস
(সপ্তম তথা শেষ পর্ব)
সুনীলকুমার রায়
মহাত্মা গান্ধীজির দ্বিতীয় দফা অসহযোগ আন্দোলনে বনগ্রামের মহিলারা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এঁরা সবাই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে শরিক ছিলেন। কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে মহিলারা হাতের বিদেশি চুরি ,শাড়ি আগুনে নিক্ষেপ করে এক উজ্জ্বলতর ভূমিকা পালন করেছেন। এঁদের মধ্যে অনন্যা ছিলেন মতিগঞ্জের রেবা দত্ত, রুনু দত্ত, পদ্ম রায়, শেফালিকা ঘোষ সহ অনেকেই।
১৯৩৯ সালে সংঘটিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করে নেয়। তীব্রভাবে চারিদিকে খাদ্যাভাবের সৃষ্টি হয়। নিরন্ন মানুষ, ক্ষুধার্ত মানুষের মিছিল সর্বত্র অন্ধকার এনে দেয়। বনগ্রাম তার ব্যতিক্রম নয়। সেই সময় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অন্যতম পথিকৃৎ বিশিষ্ট দানবীর, নীরব কবি কেশবলাল দাস এখানকার পুরপ্রধান ছিলেন। তিনি প্রত্যেকদিন এক বস্তা করে চাল, জামা–কাপড় দিয়ে অনেক দিন অবধি সাহায্য করে গেছেন।
১৯৪৬ সালে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব সৈয়দ আহমেদ আলী সাহেব ভারতের স্বাধীনতার কথা বলতে এসে সভা করেন। প্রফুল্ল ঘোষের সভাপতিত্বে পিয়ারী মোহন ব্যানার্জি (কালো বাবু) র বাড়িতে সভা হয়।
১৯৪৭ সালের ২২ ডিসেম্বর যশোরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বনগ্ৰামের ২৭ জন কংগ্রেস কর্মী ও নেতৃত্বকে যশোহর এবং পাকিস্তান ত্যাগ করার নোটিশ দেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অমূল্য কর, অশ্বিনী কর, কৃষ্ণ চ্যাটার্জী, নন্দলাল বসু, নলিনী দে প্রমুখেরা। তখন তাঁরা মতিগঞ্জে অবস্থিত জাগরন প্রেসে ওঠেন। তখন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ও গুরুত্ব বুঝে ইন্দ্র গোপাল চ্যাটার্জী (পটল বাবু), প্রফুল্ল ঘোষ ও ননীগোপাল চ্যাটার্জির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে রেটপাড়ার গৌড় বিনোদ মন্ডলের বাড়ির পিছনে পটলবাবুর একতলায় এঁদের থাকবার ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে এই বাড়িটি মূল কংগ্রেস অফিস হয়ে ওঠে। এখান থেকেই ১৯৫২ সালে সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করা হয়।
১৯৫২ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী হন ডাঃ জীবন রতন ধর। তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। পরবর্তীতে তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।এইভাবেই ধারাবাহিক আন্দোলন ও পরিকল্পিতভাবেই এখানকার কংগ্রেস দল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে মুখ্য ভূমিকা নেয়। এগুলি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। যুগান্তর পার্টি, অনুশীলন পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টিরও অনেক ইতিহাস এখানে লুকিয়ে আছে। এরপর অনেক সুযোগ্য নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে বনগাঁ কংগ্রেস এগিয়ে চলেছে। (সমাপ্ত)
-----------------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন