জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বনগাঁ কংগ্রেস (প্রথম পর্ব)
সুনীলকুমার রায়
বনগাঁয় জাতীয় কংগ্রেস দলের আনুষ্ঠানিক সূচনা বা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিস্তারিত বিবরণ সংগ্রহ করা খুবই কঠিন। অজান্তেই কিছু ঘটনা অনুল্লেখ থেকে যাবে। বস্তুত এর অনেক কারণ আছে। বনগাঁর ভৌগোলিক অবস্থান, আর্থিক পরিস্থিতি, জনপদ তৈরি না হওয়া, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি বহুবিধ কারণে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংঘটিত হতে পারেনি।
১৯০৮ সালের ১১ই আগস্ট বিপ্লবী ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়। তখন এখনকার মতো মিডিয়ার যুগ ছিল না। খবরটি বিভিন্ন প্রান্তে যেভাবে পৌঁছায় এখানেও সেইভাবে এসেছিল। পরের দিন অর্থাৎ ১২ আগস্ট ১৯০৮। কংগ্রেস দলের নেতৃত্বে বনগাঁয় এক বিশাল মিছিল হয়। মিছিলটি প্রথম থেকে শেষ অবধি মৌন ছিল। বনগাঁ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে শতাধিক শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই মিছিলে পা মেলান। এই মিছিলের আবেগে অলক বসু, গোষ্ঠ বিহারী ঘোষ, পূর্ণ সরকার সহ অনেক বিশিষ্টজনেরা অংশ নিয়েছিলেন। ইতিহাসবিদ, পরিসংখ্যানবিদ, গবেষকদের মতে, এটি ছিল বনগাঁয় কংগ্রেসের গণ আন্দোলনের সূচনা।
কিন্তু ইতিহাস বলছে ১৯২৬ সালের পূর্বে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বড় কোনও আন্দোলন গড়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। কারণ, বনগাঁ তদানীন্তন সময় সংখ্যালঘু সময়ে আধিপত্য এবং কৃষি নির্ভর ছিল।
প্রসঙ্গত, উল্লেখ করা যায়, ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। বনগাঁয় এই লীগের সমর্থন ছিল অত্যধিক। এদের নেতৃত্ব দেন কলিম উদ্দিন আহমেদ শেখ এবং কোরবান মুন্সি। অপ্রতিকূল যোগাযোগ ব্যবস্থা, নেতৃত্বের অভাব এবং অর্থনৈতিক কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য কোনও সমন্বয় সাধন করা সম্ভব হয়নি। মতিগঞ্জের বাসিন্দা জাহান আলী বিশ্বাস একাই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বিশ্বাসী ছিলেন। তখন এই সম্প্রদায়ের মধ্যে তিনিই একমাত্র প্রত্যক্ষভাবে কংগ্রেস করতেন।
তখন খুব কষ্ট করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাগদার গোবিন্দ অধিকারী, বিষ্ণু সাহা, বয়রার নন্দদুলাল সাহা, পাটকেলগাছার মোহাম্মদ কালো বিশ্বাসের মতো কিছু ব্যক্তি পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ডাঃ সুরেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জির বাড়িতে আসতেন। ডাঃ সুরেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী, ডাঃ অমর চ্যাটার্জী (নঙ্কুবাবুর পিতা) এখান থেকেই দলের কর্মসূচি গোপনে নির্ধারন করতেন। সেই সময়ই ক্যাপ্টেন সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি যশোরে চলে যান।
তখন ক্যাপ্টেন ডাঃ জীবন রতন ধরও এখানে আসতেন। দুজনই সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নিয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও কংগ্রেসের হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ডাঃ ধর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় নির্বাচিত হন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রী হন। উল্লেখ থাকে যে ১৭৮৬ সালে যশোহর জেলার সৃষ্টি।
এসব ঘটনাপঞ্জী উল্লেখ করতে গিয়ে তৎকালীন বনগাঁ সম্পর্কে কিছু বলা বাঞ্ছনীয়।
অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে বর্গীর আক্রমণে সর্বস্বান্ত হয়ে একদম নিঃস্ব অবস্থায় ভজন ঘাট অঞ্চল থেকে কাশীনাথ মাঝি সরদার, রঘুনাথ মাঝি সরদার, রাজকুমার বংশ, রাম রতন বংশ, দিনোবন্ধু বংশ, প্রহ্লাদ বংশ, শিবপদ বংশ এইরূপ বারোটি পরিবার ইছামতির গা-ঘেঁষা একটি অঞ্চলে ওঠেন। ওখানেই জঙ্গল পরিষ্কার করে জনপদ তৈরি করেন। তাঁরা সবাই মালো পরিবারের। এঁরাই প্রথম বনগাঁর ভিত্তি স্থাপন করেন। যেটি এখন পূর্বপাড়া। ..... (চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন