সমকালীন প্রতিবেদন : তালিবানদের যৌন লালসার শিকার হচ্ছেন আফগান মহিলারা। ঘরে ঢুকে জোর করে মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রেহাই পাচ্ছে না বারো বছর বয়সের কিশোরীও। নিজেদের সম্ভ্রম বাঁচাতে ঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন মহিলারা। কিন্তু কোথায় পালাবেন। ধরা পড়লে জুটছে নৃশংস শাস্তি। শুধুমাত্র তালিবান দস্যুদের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়াই নয়, তাদের যৌন ক্রীতদাসী করে রাখা হচ্ছে।
তালিবানদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে ছাড় পাচ্ছেন না আফগানিস্তানের মহিলা সাংবাদিকও। তাঁকেও পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে নিজের সম্মান বাঁচাতে। অশান্ত আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, তালিবানরা ঘরে ঢুকে আলমারিতে থাকা জামাকাপড় তন্নতন্ন করে দেখছে। পোশাক দেখে তারা বুঝে নিতে চাইছে, কোন বাড়িতে কত বছরের মেয়ে রয়েছে। সেই মেয়ে তাদের চাহিদা মেটাতে পারবে কি না। আফগানিস্তানের একের পর এক প্রদেশ দখল করে ফেলছে তালিবান জঙ্গিরা। আর যে সমস্ত এলাকা তাদের কব্জায় চলে আসছে, সেখানেই মেয়েদের উপর শুরু হচ্ছে নারকীয় অত্যাচার।
ইতিমধ্যেই তালিবানরা স্থানীয় ইমামদের নির্দেশ দিয়েছে, মহিলাদের তালিকা তৈরি করতে। বারো বছর থেকে ৪৫ বছরের মহিলাদের তালিবানদের হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে যে সমস্ত মেয়ের বিয়ে হয়নি, কিংবা বিধবা, তাদেরকেই আগে তালিবানদের হাতে তুলে দেওয়ার ফতোয়া এসেছে। আফগানিস্তানের উত্তরে একটি শহরে থাকা ২২ বছরের এক মহিলা সাংবাদিকের উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে তালিবানদের। আর সেটা বুঝেই ওই সাংবাদিক নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। কাকাকে সঙ্গে নিয়ে পালান তিনি। বাড়ি ছেড়ে এসে প্রথমে যেখানে ওঠেন, সেই ঠিকানার খবর পৌঁছে যায় তালিবানদের কাছে। ফলে ফের তাঁকে পালাতে হয়। প্রত্যন্ত গ্রামের পথ ধরে দু'ঘণ্টা হেঁটে এক গোপন আস্তানায় আপাতত রয়েছেন তিনি। ওই মহিলা সাংবাদিকের চোখে মুখে চরম উদ্বেগ। এত লড়াইয়ের পরও নিজেকে বাঁচাতে পারবেন তো? সেই প্রশ্নটাই সবসময় ঘুরপাক খাচ্ছে মনের ভিতর। সংবাদ মাধ্যমকে ওই মহিলা সাংবাদিক বলেছেন, জানি না কী হবে। আর কোনওদিন পরিবারের কাছে ফিরতে পারব কি না জানি না। বাড়ির লোকজন কেমন আছে, সেটাও জানি না। কোথায় যাব আমি? কীভাবে নিজেকে রক্ষা করব, কিছুই ভাবতে পারছি না।
(আরও পড়ুন : বিএসএফের হাতে আটক প্রচুর ইলিশ)
কতটা নারকীয় সন্ত্রাস চালাতে পারে তালিবান, আফগানিস্তানের ছবিটা দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। একদিকে রাস্তায় পড়ে রয়েছে লাশ। পথ কুকুরের দল সেইসব মৃতদেহ খুবলে খাচ্ছে। নিহতদের বেশিরভাগই সরকারি কর্তা। অনেকে আবার চাকরি ছেড়েছেন আগেই। কিন্তু অভিযোগ, এখনও সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁদের। সেই অপরাধে তালিবান জঙ্গিদের হাতে একের পর এক প্রাণ যাচ্ছে। অন্যদিকে, ঘর থেকে মেয়েদের টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তালিবানদের বউ করার জন্য। অরাজি হলেই তাকে যৌনদাসী করে রাখা হচ্ছে। একটার পর একটা প্রাদেশিক রাজধানি দখল করছে তালিবানরা। ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানের ৬৫ শতাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে তারা। আগামী তিনমাসের মধ্যে তালিবানরা কাবুল দখল করে নেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মহল।
কুন্দুজ থেকে সম্প্রতি পালিয়ে এসেছেন ২৫ বছরের মারওয়া। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, স্বামীকে হারিয়েছেন। তাঁর ১৬ বছরের বোনকেও তুলে নিয়ে গিয়েছে তালিবানরা। বোনের সঙ্গে যাঁর বিয়ে হওয়ার কথা, তিনি ফ্রান্সে থাকেন। তালিবানরা অলিখিত ফতোয়া জারি করেছে, কোনও পরিবারে দু'টি মেয়ে থাকলে একজনকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। পরিস্থিতি এমনই যে, মেয়েরা কেউ একা বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। বাধ্যতামূলকভাবে তাঁদের হিজাব পরতে হচ্ছে।
বেশিরভাগ স্কুল ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। একমাত্র মহিলা শিক্ষক থাকলে তবেই মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে কোথাও কোথাও। কেউ এতটুকু নিয়ম ভাঙলে কড়া শাস্তি পেতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন তাঁদের অভিভাবকরা। কখন তালিবান হামলা চালাবে, মেয়েদের তুলে নিয়ে যাবে, সেই আতঙ্কে তটস্থ হয়ে রয়েছেন তাঁরা। আফগানিস্তানের মেয়েরা জানিয়েছেন, তালিবানদের ভয়ে তাঁরা জোরে কথা বলতে পারছেন না। গান শুনতে পারছেন না। সারারাত দু'চোখে ঘুম নেই। তাঁদের জীবন এখন সরু সুতোয় ঝুলছে...।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন