সমকালীন প্রতিবেদন : এ যেন সাক্ষাৎ যম দুয়ার থেকে ফিরে আসা। কাজের সূত্রে আফগানিস্তানে গিয়ে তালিবানি শাসনের মাঝে পড়ে জীবন শংসয় হয়ে পড়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে অনেক সংগ্রাম করে অবশেষে বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরতে পারলেন উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানার তিন যুবক। সোমবার গভীর রাতে তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন। তাঁদের এই বাড়ি ফেরার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সকাল থেকে তাঁদের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন পরিজনেরা।
ক্যাটারিং এর কাজ নিয়ে একটি সংস্থার মাধ্যমে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন গোপালনগর থানার পাল্লা গ্রাম পঞ্চায়েতের শংকরপুর গ্রামের বিদ্যুৎ বিশ্বাস, পলাশ সরকার এবং রঘুনাথপুর গ্রামের প্রবীর সরকার। সবকিছু ভালই চলছিল। কিন্তু যখন থেকে তালেবানের দখলে চলে এলো সেদেশের প্রায় গোটাটাই, তখন থেকে অত্যাচার শুরু হল। আর তারপর থেকেই শুরু হয় আতঙ্ক। টিভির পর্দায় সেই সব দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিলেন এই যুবকদের পরিবারের লোকজন। প্রতি মুহূর্তে যেন জীবন–মৃত্যুর মধ্যে টানাটানি চলছিল।
বাড়ি ফিরে আসা যুবকদের মধ্যে একজন বিদ্যুৎ বিশ্বাস জানালেন, 'জলের স্রোতের মতো কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কাবুল দখল করে নিল তালিবানি সেনারা। তখন আতঙ্ক যেন আরও বেড়ে গেল। বাইরের ওই পরিস্থিতি দেখে আমাদের মধ্যে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্ক কাজ করছিল। তালিবানরা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছিল। আর সে কারণেই আমরা প্রতি মুহূর্তে বাড়ি ফিরে আসার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। এয়ারপোর্টের ভেতরে আমেরিকান সেনাদের তত্ত্বাবধানে আমরা একটি ঘরের মধ্যে আটকে ছিলাম। সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ফেরাটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে আমরা কাজ ছেড়ে দিয়ে কাবুল এয়ারপোর্টের ভেতরে ঘরের বাইরে একপ্রকার ধর্ণায় বসে যাই।'
অবশেষে ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি পুলিশের সহযোগিতায় কার্গো ফ্লাইটে তাদেরকে কাতারে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখানে বিশেষ তাঁবুতে রেখে দুদিন পর ভারতীয় দূতাবাসের সাহায্যে ১৯৯ জন ভারতীয়কে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়। সেখান থেকেই সোমবার গভীর রাতে বাড়ি ফেরেন গোপালনগরের এই তিন যুবক।
বাড়ি ফিরে আসা আর এক যুবক পলাশ সরকার জানালেন, 'এয়ারপোর্টের বাইরে তখন গোলাগুলি চলছে, আর ঘরের ভেতরে আমরা সেই শব্দ শুনে আতঙ্কে কেঁপে উঠছি। শুধুই মনের মধ্যে শঙ্কা হচ্ছিল, আদৌ আর বাড়ি ফিরতে পারবো তো ? কিভাবে, কখন বাড়ি ফিরবো, সেই চিন্তাই সারাক্ষণ মাথার মধ্যে ঘুরছিল।
অবশেষে ভারত সরকার, আমেরিকান সেনা এবং আমাদের কোম্পানির সহযোগিতায় বাড়িতে ফিরতে পেরে মনে হচ্ছে যেন নতুন জীবন ফিরে পেলাম।' এই তিন যুবক অবশেষে সুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরতে পারায় স্বস্তি নেমে এসেছে তাঁদের পরিবারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন