স্বপন ঘোষ : ইউনেস্কো ভারতের চল্লিশতম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করল গুজরাতের ধোলাবিরাকে। এই নিয়ে এবছর ভারতের দুটি ঐতিহাসিক স্মারক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকার অন্তর্ভুক্ত হলো। ইউনেস্কো গত ২৫ জুলাই কাকতীয় রাজবংশের তৈরি করা তেলেঙ্গানার রামাপ্পা মন্দিরকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছে।
গুজরাতের ধোলাবিরা প্রত্নক্ষেত্রটি সিন্ধু সভ্যতার অন্যতম প্রধান প্রত্নক্ষেত্র হিসাবে স্বীকৃত। ১৯৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ( Archeological Survey of India) অন্যতম সদস্য জে .পি .যোশী সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নক্ষেত্রগুলির মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম এই প্রত্নক্ষেত্রটি আবিষ্কার করেন। ASI এর তত্ত্বাবধানে ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত এই প্রত্নক্ষেত্রটির খননকার্য চলেছিল।
ধোলাবিরা কেন্দ্রটি কচ্ছের 'রণ' এর ভেতরে খাদির নামক একটি দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত। ধোলাবিরার ভৌগলিক অবস্থান ২৩° ৫৩' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭০° ১২' পূর্ব দ্রাঘিমায়। এই অঞ্চল বরাবরই কম বৃষ্টিপাতপ্রবন- বছরে ১০ ইঞ্চির মত। তবে এই অঞ্চলের জমির নীচে চুনাপাথরের স্তরে জলের প্রাচুর্য আছে। সিন্ধু সভ্যতার লোকেরা কেন এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর গড়েছিলেন, তা অবশ্য এখনও সবটা বোঝা যায় না। তবে ঘগ্গর- হাকরা এবং সিন্ধুর মিলিত প্রবাহ এই অঞ্চলে এসে মিশত। ফলে সিন্ধু সভ্যতার অন্য অঞ্চলগুলির সঙ্গে ধোলাবিরার যোগাযোগ ছিল এবং এখনকার চেয়ে এই অঞ্চল সবুজ ও বাসযোগ্য ছিল বলে ধরে নেওয়া যায়।
ধোলাবিরার খননকার্যের ওপর যা প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে অনেক কিছুরই কোনও সুষ্ঠু নকশা বের হয়নি। যার ফলে কোনও পরিস্কার ছবি তুলে ধরা এখনও সম্ভব নয়। তবে কেন্দ্রটির বেশ কিছু নিজস্ব বা আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য আছে। প্রথমত, 'উচ্চ', 'মধ্যম', এবং ' নীচ'- এই তিন স্তরে নগর পরিকল্পনা অন্য কোথাও পাওয়া যায় নি। নগরের ভেতরে বড় বড় খোলা জায়গাও অন্যত্র ধরা পড়েনি। দ্বিতীয়ত, জল সংগ্রহ করে রাখার ব্যাপারে নগরটিতে অতিরিক্ত গুরুত্ব ছিল। তৃতীয়ত, প্রস্তর-স্তম্ভ এবং কিছু বৃহৎ প্রস্তর খণ্ড- প্রত্যেকটিই ভাল পালিশ করা। চতুর্থত, এক ফুটের বেশি উঁচু লিপিচিহ্ন পাথরে কেটে বানিয়ে ৯ টি কাঠের ফলকের ওপর সাজিয়ে সাইনবোর্ড তৈরি করা ছিল। সত্যি বলতে ধোলাবিরার বিভিন্ন আবিষ্কারের গুরুত্ব আমরা এখনও পুরো বুঝতে পারিনি। এরজন্য প্রথম দরকার খননকার্যের পূর্ণাঙ্গ বিবরণের সুষ্ঠু প্রকাশনা। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষিত হওয়ার পরে এবার হয়ত সরকারি তরফে ধোলাবিরার গুরুত্ব বাড়বে।
তথ্যসূত্র :
১) R.S.Bishot : Dholavira : New Horizons of the Indus Civilization.
২) দিলীপ কুমার চক্রবর্তী : ভারতবর্ষের প্রাগৈতিহাস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন