সমকালীন প্রতিবেদন : করোনার কারনে দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ। তাই পড়াশোনাও একপ্রকার শিকেয় ওঠার জোগাড়। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ছাত্রজীবন। এই পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের পড়ায় উৎসাহ দিতে অডিও স্পিকার, মেমোরি চিপ,আর প্রশ্নপত্র নিয়ে পড়ুয়াদের বাড়িতে হাজির হচ্ছেন বীরভূম জেলার মোহাম্মদ বাজারের প্রাথমিক শিক্ষকেরা। তাঁদের এই ভূমিকায় খুশি ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকেরাও।
করোনাকালে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল প্রতিষ্ঠান। স্বাভাবিকভাবেই নিয়মিত পঠনপাঠনও বন্ধ। তাই দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা সচল রাখতে অডিও স্পিকার, মেমোরি চিপ আর প্রশ্নপত্র নিয়ে গ্রামে গ্রামে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে হাজির হয়ে যাচ্ছেন মোহাম্মদ বাজার চক্রের প্রাথমিক শিক্ষকেরা। আর শিক্ষকদের দিয়ে যাওয়া এই তিনটি জিনিসে ভর করেই নতুন করে পড়াশোনায় উৎসাহ তৈরি হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। শিক্ষকদের এমন উদ্যোগে খুশি অভিভাবকেরা।
আপার প্রাইমারি সেকশনে অনেক স্কুলে অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও সমস্ত ছাত্রছাত্রীর কাছে সেই পরিষেবা পৌঁছাচ্ছে না। মোবাইল না তাকায় কোথাও কোথাও অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এক শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী। আর এই সমস্যা সমাধানে মূলত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে পরীক্ষামূলকভাবে বীরভূমের মোহাম্মদ বাজার চক্রের অন্তর্গত চরিচা পঞ্চায়েতের রাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, দোবান্দী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নিমদাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, আঙ্গার গড়িয়া পঞ্চায়েতের রাজ্যধরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন অন্য মনের শিক্ষক নিজেদের উদ্যোগে অডিও স্পিকারের মাধ্যমে পড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। নিজেরাই পড়ুয়াদের জন্য একটি করে স্পিকার ও মেমোরি চিপ দিচ্ছেন। সঙ্গে দিচ্ছেন প্রশ্নপত্র। যাতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় উৎসাহ জাগে এবং তাদের পড়াশোনার মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়।
এই উদ্যোগে সামিল শিক্ষক সুশান্ত অধিকারি জানালেন, 'ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকদের দেওয়া মেমোরি চিপে শিক্ষকদের অডিও রেকর্ড শুনছে এবং তার ভিত্তিতে প্রশ্নপত্রে উত্তর লিখছে। স্কুল বন্ধ হওয়ার ফলে যে ছাত্রছাত্রীরা মানসিকভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে ছিল, পড়াশোনা বাদ দিয়ে শুধু খেলায় মেতে ছিল, তারাও শিক্ষকদের কাছে পেয়ে শিক্ষকদের দেওয়া স্পিকারে শিক্ষকদের পড়া শুনে নতুন ভাবে পড়াশোনায় উৎসাহী হয়েছে।' আর এক শিক্ষক দেবজিত ঘোষ জানান, 'এমন পড়াশোনার উদ্যোগে সামিল হয়েছেন অভিভাবকেরাও। নিজের ছেলের পড়াশোনা হয়ে গেলে তাঁরাই শিক্ষকদের দিয়ে যাওয়া মেমোরি চিপ এবং অডিও স্পিকার পৌঁছে দিচ্ছেন অন্য ছাত্রের বাড়িতে। আর এভাবেই চলছে নতুন ভাবে পড়াশোনার পাঠ।'
দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের অডিও স্পিকারের মাধ্যমে এক একদিন করে এক একটি বিষয়ের উপর শিক্ষকেরা ক্লাস করাচ্ছেন। ছাত্রছাত্রীদের হাতে দিচ্ছেন বাংলা, ইতিহাস, ভূগোল, পরিবেশ বিজ্ঞানের মতো নানান বিষয়ের প্রশ্নপত্র। আর ছাত্রছাত্রীরা সেই প্রশ্নপত্রের উত্তর শিক্ষকদের দেওয়া অডিও চিপের মাধ্যমে শুনে সেগুলি লিখছে। শিক্ষকেরা সপ্তাহান্তে এসে সেগুলি ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নিয়ে মূল্যায়ন করছেন।
আর এভাবেই পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সম্পর্ক হয়ে উঠছে সুমধুর। করোনাকালে সারাবাংলাকে প্রাথমিক শিক্ষায় এমন নতুন পাঠের সন্ধান দিচ্ছেন মোহাম্মদ বাজারের প্রাথমিক শিক্ষকেরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন