Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ২১ জুলাই, ২০২১

বেকারি কর্মী থেকে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী

 

The youngest in the world from a bakery worker Prime Minister

সমকালীন প্রতিবেদন : তিনি সিঙ্গল মাদারের সন্তান। শৈশব কেটেছে ভাড়াবাড়িতে। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর তাঁর বড় হয়ে ওঠা সমকামী পরিবারে। তাঁকে বড় করে তোলেন মা ও তাঁর সঙ্গিনী। পারিবার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রথমদিকে খানিকটা হোঁচট খেতেন। কেমন যেন নিজেকে গুটিয়ে ফেলতেন। কিন্তু তাঁকে বরাবর সাহস ও আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন তাঁর জন্মদাত্রী। মায়ের কথাতেই কেটে যায় তাঁর জড়তা। একদিন নিজেই জানান, রামধনু পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি। তিনি সানা মারিন। জন্মগত নাম সানা মিরেলা মারিন। আজ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির জোট সরকারের ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। 

The youngest in the world from a bakery worker Prime Minister

ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে সানার জন্ম ১৯৮৫ সালের ১৬ নভেম্বর। মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন। শুধু দেশের নন, গোটা বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী তিনি। শ্রমিক পরিবারের সন্তান। ছোট থেকেই তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে। কিন্তু কখনও হার মানেননি। তামপেরে শহরে যাওয়ার আগে তিনি এস্পো ও পিরকালায় থেকেছেন। বাবা লরি মারিন। তিনি মদ্যপানে আসক্ত ছিলেন। পরিবারে তিনিই প্রথম, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার করেন। কার্যত অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। ২০০৪ সালে হাইস্কুলের পাঠ শেষ করেন। এর পর ইউনিভার্সিটি অফ ট্রাম্পে থেকে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সায়েন্স নিয়ে অর্জন করেন স্নাতক ডিগ্রি। ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর। যখন তাঁর বয়স ২৭ বছর, পা রাখেন রাজনীতিতে। সদস্য হন ট্রাম্পে সিটি কাউন্সিলের। এর পর চেয়ারপার্সন। ২০০৬ সালে যোগ দেন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথে। ২০১০-১২ পর্যন্ত এই দলের সহ সভানেত্রী ছিলেন। ২০১৪ সালে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির দ্বিতীয় ডেপুটি চেয়ারপার্সন। ২০১৫ সালে ৩০ বছর বয়সে প্রথমবার ফিনল্যান্ড পার্লামেন্টের সাংসদ নির্বাচিত। ২০১৯ সালের ৬ জুন দেশের যোগাযোগ ও পরিবহণ মন্ত্রী। ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী। 

পরিবার মোটেই স্বচ্ছল ছিল না। পড়াশোনা করতে করতেই ১৫ বছর বয়সে সানা একটি বেকারিতে কাজ নেন। বাড়তি অর্থ উপার্জনের জন্য হাইস্কুলে পড়াকালীন বিক্রি করতেন ম্যাগাজিন। স্নাতকের পর তিনি একটি সংস্থায় ক্যাশিয়ার পদে চাকরি পান। ফিনল্যান্ডের ক্ষমতাসীন পাঁচ দলের জোট সরকার চলছে। আর ওই সরকারের প্রধান সানা। শুধু তিনি নন, জোটের পাঁচটি দলেরই মাথায় রয়েছেন নারীরা। প্রত্যেকের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। প্রায় এক শতাব্দী আগে ফিনল্যান্ডের পার্লামেন্টে প্রথমবার নারীরা নির্বাচিত হয়েছিলেন। সানার আগে দু'জন মহিলা প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে ফিনল্যান্ড। কিন্তু তাঁরা কেউই এক বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এর আগে বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইউক্রেনের ওলেক্সি হোঞ্চারুক। ৩৫ বছর বয়সে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁকেও পিছনে ফেলে ৩৪ বছরেই ওই পদে বসেছেন সানা। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেনের বয়সও ৪০ পেরোয়নি। ২০১৮ সালে কন্যাসন্তানের মা হয়েছেন সানা। মেয়ের নাম রেখেছেন এমা। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর লিভ ইন পার্টনার মার্কাস রাইক্কোনেন।

পরিবারের পাশাপাশি পোশাক নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সানাকে। গত বছরের কথা। একটি ম্যাগাজিনের ট্রেন্ডিং এর জন্য ফটোশ্যুটে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সেখানে পরেন গভীর লো কাট ব্লেজার। সেই ছবি কভার ইমেজ করে ম্যাগাজিন সংস্থা। তা নিয়েই শুরু হয়ে যায় হইচই। কেন একজন প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের পোশাক পরবেন, তা ঘিরে দেখা দেয় বিতর্ক। এমনিতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সানা। কিন্তু সম্প্রতি সরকারি টাকায় ব্রেকফাস্টের বিল নিয়ে ফের বিতর্কের শিরোনামে উঠে আসেন তিনি। সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ নিয়ে তাঁর পরিবারের ব্রেকফাস্টের বিল মেটানো হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। যা এক বালতি দুধের মধ্যে এক ফোঁটা গোচোনার মতো হয়ে দাঁড়ায় তাঁর কাছে। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভীষণ সক্রিয়। ইনস্টাগ্রামে অনবরত আপডেট দিতে থাকেন। নানা খুঁটিনাটি বিষয় উঠে আসে তাঁর পোস্টে। তিনি প্রকাশ্যেই বলেন, 'আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী ঠিকই, কিন্তু মূলত যুব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করি।'‌ স্কুলে পড়ার সময়েও কিন্তু সানা ভাবেননি, তিনি রাজনীতিতে আসবেন। বরং রাজনীতির প্রতি কিছুটা বিতৃষ্ণা ছিল তাঁর। ভাবতেন, যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁরা অন্যরকম পরিবার থেকে আসেন। তাঁর পরিবার সেরকম নয়। প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসার পর তাঁকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমেও অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু সেসবে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেননি। নিজেই বলেছেন, খবরের কাগজে ওসব প্রতিবেদন তিনি উল্টেও দেখেননি। কাজের মাধ্যমেই নিন্দুকদের জবাব দিতে চান সানা। ফিনল্যান্ডকে আরও শক্তিধর করতে চান। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এগিয়ে চলেছেন তিনি। বিশ্বের অনেক দেশেরই নজর এখন ফিনল্যান্ডের দিকে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন