সমকালীন প্রতিবেদন : চিকিৎসাবিজ্ঞানে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে ১০২ বছর বয়সে দেহদানের অঙ্গীকারে আবদ্ধ হলেন বৃদ্ধ। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে রবিবার এই অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করলেন বনগাঁর কুড়ির মাঠ এলাকার বাসিন্দা গদাধর রায়। স্বাক্ষরের পর গদাধরবাবু জানালেন, 'অনেকদিনের ইচ্ছে পূরণ হলো আজ।'
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১৯১৯ সালে নদীয়ার রানাঘাটে জন্ম গদাধরবাবুর। ছোটবেলায় মাকে হারানোর পর উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানার কাপাশআটি গ্রামে মামার বাড়িতে চলে আসেন। সেখান থেকেই বড় হয়ে ওঠা। পরবর্তীতে কাজের সূত্রে বনগাঁতে চলে আসেন। দলিল লেখকের কাজ করে সংসার প্রতিপালনের দায়িত্ব সামলান গদাধরবাবু। একসময় অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। বর্তমানে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির একনিষ্ঠ গুনগ্রাহী। তিন ছেলে এবং তিন মেয়ে প্রত্যেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে। নাতি-নাতনি হয়েছে। বছর কয়েক আগে স্ত্রী রেখা রায় ৮২ বছর বয়সে তাঁকে ছেড়ে পরলোকে চলে গেছেন। এখন ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনীদের নিয়ে বনগাঁর কুড়ির মাঠের বাড়িতে বসবাস তাঁর। এখনও ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি, নাত জামাইদের সঙ্গে তাসের আড্ডাতেও নিজেকে সামিল রাখেন।
এখনও প্রতিদিন এক প্যাকেট করে সিগারেট লাগে গদাধর রায়ের। সঙ্গে ৩০০ জর্দা সহযোগে ১২ টি পান। সাতসকালেই তিনবার দুধ চা। সকাল আটটার পরপরই সবজি সহযোগে একটু গরম ভাত। নিজের হাতে দাঁড়ি কেটে, তেল মেখে সকাল দশটার মধ্যেই স্নান। নিয়মিত তিনবার করে দাঁত মাজা এবং দুটি করে খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস এখনও রয়েছে। দুপুর সাড়ে বারোটার মধ্যে ভাত, সঙ্গে সবজি, মাছ, টক দই এবং মিষ্টি। বিকেল চারটেয় আবার চা। এরপর একপ্রস্থ হাঁটা। সন্ধে ছটার মধ্যে আটার রুটি, দুধ, মিষ্টি দিয়ে রাতের আহার সম্পন্ন। বিশ্রাম নিতে নিতেই নিয়ম করে টিভিতে খেলা দেখা, খবর শোনা। আর তারপরেই নিজে হাতে বিছানা করে শুয়ে পড়া। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই রুটিনেই চলছে গদাধরবাবুর জীবন। আর এভাবেই বিনা ব্যাধিতে সুস্থভাবে দিব্যি বেঁচে রয়েছেন গদাধর রায়।
গদাধরবাবুর ছোট ছেলে, স্থানীয় তৃণমূল নেতা পঙ্কজ রায় জানালেন, 'বেশ কয়েক বছর ধরেই বাবা আমাদের কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেন দেহ দান করার। বাবার ইচ্ছে, তাঁর এই দেহ যদি চিকিৎসা বিজ্ঞানে কোনও কাজে আসে, তাহলেই সার্থক হবে তাঁর এই জীবন। বাবার ইচ্ছাকে সম্মান দিতেই আমরা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আজ তাদের চুক্তিপত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন বাবা। বাবার এই ভূমিকায় আমাদের পরিবারের সমস্ত সদস্য খুবই খুশি এবং গর্বিত।'স্বেচ্ছাসেবা সংস্থা মছলন্দপুর বিজ্ঞান চেতনা মঞ্চের সদস্য ড: কমলকৃষ্ণ সরকার জানালেন, 'চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং মানব কল্যানের প্রসারের জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। এই চেষ্টায় গদাধর রায়ের মতো মানুষের সামিল হওয়া অনেক মানুষকেই উৎসাহিত করবে।' বনগাঁর পুর প্রশাসক গোপাল শেঠ জানান, 'দেহদানের মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞান উপকৃত হবে। গদাধর রায়ের দেহদানের ঘটনাকে সম্মান জানাই। তাঁর এই মানসিকতায় আমার মতো গোটা বনগাঁবাসী আজ গর্বিত।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন