সমকালীন প্রতিবেদন : আপনার মাছ চাষের শখ? কিন্তু পুকুর বা জলাশয় নেই। এতে চিন্তার কী! বাড়ির ছাদে ট্যাঙ্কেই আপনি পছন্দমতো মাছ চাষ করতে পারেন। এতে অনায়াসেই বাড়ির প্রয়োজনটুকু মিটবে। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ট্যাঙ্কে কম-বেশি সব মাছই চাষ করা যায়। কিন্তু কই, শিঙি, মাগুর, পাঙ্গাস, তেলাপিয়ার মতো মাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
জেনে নিন মাছ চাষের জন্য কেমন ট্যাঙ্ক দরকার?
গোলাকার ট্যাঙ্কই ভালো। চারকোণা হলেও চলবে। মোটা পলিথিন বা সিমেন্ট দিয়ে এই ট্যাঙ্ক তৈরি করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্যাঙ্কে মাছ চাষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জল। গভীর নলকূপের জল ব্যবহার করতে হবে। ট্যাপের জলে ক্লোরিন থাকে। এই জল ব্যবহার করলে অ্যামোনিয়ার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এতে মাছের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা। উৎসাহীরা সংশ্লিষ্ট জেলায় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে যোগাযোগ করলে ট্যাঙ্কে মাছ চাষের ব্যাপারে পরামর্শ পাবেন। উত্তর ২৪ পরগনার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ (মৎস্য) অনিন্দ্য নায়েক বলেছেন, ছাদ কতটা ভার বহন করতে পারবে, সেটা ইঞ্জিনিয়ারদের খতিয়ে দেখে তবেই ছাদে মাছ চাষের ট্যাঙ্ক করা উচিত। তাছাড়া ছাদে শেডের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে জল সবুজ হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। মাটিতে ট্যাঙ্ক করলেও নিচের জল বের করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এয়ার পাম্প জরুরি।
ট্যাঙ্কে মাছ চাষে অক্সিজেনের দিকেও নজর রাখতে হবে। ট্যাঙ্কের জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ৪-৬ পিপিএম থাকা দরকার। জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে মাছ মরতে শুরু করবে। সেজন্য এয়ার পাম্পের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অক্সিজেন মাপার জন্য বাজারে কিট কিনতে পাওয়া যায়। মাছ মুখ খুলে মারা গেলে বুঝতে হবে, জলে অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে। জলের সঠিক লবণাক্ততা বজায় রাখা জরুরি। লবণাক্ততা জলে অক্সিজেন ধরে রাখতে সাহায্য করে। নিয়ন্ত্রণে রাখে জলের পিএইচ। যা মাছের ক্লান্তি দূর করে। মাছের খাবার হজমে সাহায্য করে। অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বাড়তে বাধা দেয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার শস্য শ্যামলা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ (মৎস্য) ড. স্বাগত ঘোষ জানিয়েছেন, ট্যাঙ্কে মাছ চাষের ক্ষেত্রে জল পরিশোধনের ব্যবস্থা না থাকলে প্রতিদিন ৫ শতাংশ করে জল বের করে দিতে হবে। আবার সম পরিমাণ নতুন জল যোগ করতে হবে। ট্যাঙ্কের নিচে জমা হওয়া মাছের বর্জ্য পরিষ্কার করে দিতে হবে। প্রতি লিটার জলে যেন একটি করে মাছ থাকে। বুঝেশুনে খাবার দিতে হবে। অতিরিক্ত খাবার দিলে নষ্ট হবে। জল তাড়াতাড়ি খারাপ হবে। তেলাপিয়া কিংবা পাঙ্গাস মাছের জন্য ভাসমান খাবার দেওয়া উচিত। শিঙি, মাগুরের ক্ষেত্রে ভাসমান খাবারের প্রয়োজন নেই। যদি জলের পিএইচ কমে যায়, তা হলে চুন প্রয়োগ করতে হবে। পিএইচ বাড়লে তেঁতুল-জল যোগ করতে হবে। জলে পিএইচ কমলে মাছ অস্বাভাবিকভাবে সাঁতার কাটে। পাখনা ঝাপটায়। মাছের ক্লান্তি দেখা দেয়। মাছের বৃদ্ধি কমে যায়। ফুলকা দিয়ে পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। জলে পিএইচ বাড়লে মাছের চোখ রক্তবর্ণ হয়। কুঁচকে যায় চামড়া।
ট্যাঙ্কে মাছ চাষে জলের অম্লত্ব পরিমাপের পাশাপাশি ক্ষারত্ব মাপতে হবে। এটি মাপার জন্য বাজারে কিট কিনতে পাওয়া যায়। মাছের খাবারের সঙ্গে অ্যামোনিয়ার গভীর সম্পর্ক। খাবার গ্রহণের পর ফুলকা ও বর্জ্যের মাধ্যমে অ্যামোনিয়া গ্যাস ছাড়ে। ফলে বেশি খাবার প্রয়োগ কিংবা বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার দিলে তাড়াতাড়ি অ্যামোনিয়া তৈরি হয়। ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ে। প্রয়োজনীয় কার্বন উৎস যোগ করতে পারলে অ্যামোনিয়া তৈরির পরিমাণ কমে। প্রতি লিটার জলে ২ মিলিগ্রামের বেশি অ্যামোনিয়া তৈরি হলে প্রয়োজনীয় কার্বন উৎস ও প্রোবায়োটিক দিতে হবে। তার পরও নিয়ন্ত্রণ না হলে ৫০ শতাংশ জল বের করে দিতে হবে।সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অফ ফিশারিজ এডুকেশনের বিজ্ঞানী ড. বি কে মহাপাত্র বলেছেন, ট্যাঙ্কে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যেতে পারে। বায়োফ্লকের মূল কথা, বর্জ্য পদার্থকে ধরে রেখে তাকে প্রাকৃতিক খাদ্যে পরিণত করা। বায়োফ্লক তৈরির সময় জলের সঙ্গে প্রোবায়োটিক মেশানোর আগে দরকার লবণ, ডলোমাইট ও চিটেগুড়। সামুদ্রিক লবণ লাগে। পরিশোধিত লবণ উপকারি ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ও বিপাকে ক্ষতি করে। প্রথম দিন লবণ মেশাতে হবে। পরের দিন দিতে হবে চুন। এর পর মাছ ছাড়তে হবে। মাছ ছাড়ার ৬ ঘণ্টা পর দিতে হবে খাবার। ১২ ঘণ্টা পর প্রোবায়োটিক দিত হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন