Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১

শরীরে জেল্লা বাড়াতে রোজ সকালে জল খান তামার পাত্রে


Drink water in a copper pot in the morning

সমকালীন প্রতিবেদন : সারাদিন প্লাস্টিকের বোতলে জল খাচ্ছেন? না জানতেই কিন্তু এতে নিজের বিপদ ডেকে আনছেন আপনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সুস্থ থাকতে চান, তাহলে আপনার লাইফস্টাইলে যোগ করুন তামার পাত্রের ব্যবহার। ফিরিয়ে আনুন পুরনো ধাতুকে। অতীতে কাঁসা, পিতলের পাশাপাশি তামার পাত্রে খাওয়ার চল ছিল। বিকল্প হিসেবে ছিল মাটির পাত্র। সময়ের সঙ্গে সেই জায়গা নেয় অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, মেলামাইন। কিন্তু তামার পাত্রের ব্যবহারে উপকারিতা অনেক। বিশেষজ্ঞদের দাবি, রোজ সকালে আপনি যদি তামার পাত্রে জল খান, তাহলেই চমক দেখাতে পাবেন। জেল্লা বাড়বে শরীরে। রোগভোগ বিদায় নেবে। তামার গ্লাসে আগের রাতে জল ভরে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে সেই জল খেতে হবে খালি পেটে। কিছুদিন এটা করতে পারলেই ফল মিলবে ম্যাজিকের মতো। 

অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ধর্মের জন্য তামার পাত্রে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ১৬ ঘন্টা পর্যন্ত জল সংরক্ষণ করা হলে সেই জলে থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলি নষ্ট হয়ে যায়। এতে ওই জল পান করলে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কমে অনেকটাই। ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যারোলিনের তথ্য বলছে, তামায় রয়েছে জল বিশুদ্ধিকরণ ধর্ম। যার ফলে এই ধাতু জলে থাকা প্রায় ৯৭ শতাংশ জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ও মাইক্রোব সমূহকে নির্মূল করতে পারে। তামা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমাদের মস্তিষ্ক এক নিউরন থেকে অন্য নিউরনে সিন্যাপসিসের সাহায্যে সিগন্যাল পাঠিয়ে থাকে। কপার তথা তামা ফসফোলিপিড তৈরি করে, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। ম্যালিন শিথস এর উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে তামার পাত্রে খাওয়া উপকারী। ওজনকে যারা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করছেন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনছেন, তারা একইসঙ্গে জল রাখার ও জল পানের পাত্র বদলে ফেলুন। 

বেশিরভাগ বাড়িতেই প্লাস্টিকের জারে বা বোতলে জল রাখা হয়। প্লাস্টিক পার্টিকেল জলের সাহায্যে খুব স্বল্প পরিমাণে হলেও শরীরে প্রবেশ করে এবং ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করে। অন্যদিকে, তামার পাত্রে জল রাখা হলে জলে তামার উপকারিতার অনেকটা যোগ হবে। দেখা গেছে, তামার পাত্রে জল রাখার ফলে এবং সেই জল পান করা হলে, পাকস্থলির ভেতর খাদ্য দ্রুত ও ভালোভাবে পরিপাক হয়। ফ্যাট শরীর থেকে বের করে দিতে কাজ করে। ফলে শরীরে বাড়তি ফ্যাট জমতে পারে না। বয়স বৃদ্ধির হার শ্লথ করে। তামাকে বলা হয়ে থাকে বলিরেখা দূরীকরণের প্রাকৃতিক উপাদান। বয়সজনিত ও অনিয়মজনিত কারণে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়লে ধীরে ধীরে তা মুছে ফেলতে তামার পাত্রে রাখা জল পানের দিকে নজর দিতে হবে। গবেষণার তথ্য বলছে, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এই ধাতু থেকে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা কোষকে পুনরুজ্জীবিত করে। এছাড়া এই ধাতু ক্ষতিকর রেডিক্যাল মুক্ত হওয়ায় ত্বক তো বটেই, স্বাস্থ্যের উপরেও কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারবে না। হাড়ের ব্যথায় উপকারী তামা। 

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানের পাশাপাশি তামা একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি তথা প্রদাহবিরোধী উপাদান। ফলে শরীরের যেকোন অংশের প্রদাহজনিত ব্যথার পাশাপাশি আর্থারাইটিসজনিত হাড়ের ব্যথাতেও তামার পাত্রে ধারণ করা জল খাওয়া উপকারী। বিশেষত হাড়ের ব্যথা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে প্রতিদিন সকালে তামার পাত্রে জল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে তামা। একদিকে মেলামাইন ও প্লাস্টিকের পাত্র ক্যানসারকে ডেকে আনে, অন্যদিকে তামার পাত্র ক্যানসার থেকে শরীরকে প্রতিরোধে কাজ করে। বিশেষত এই ধাতুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-কারসেনোজেনিক ধর্ম শরীরে ফ্রি রেডিক্যালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে ক্যানসার বাসা বাঁধার ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং যাদের শরীরে ক্যানসারের সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ক্যানসার বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে।

এখানেই শেষ নয়। তামার পাত্রে খাবার খাওয়া, তামার গ্লাসে বা বোতলে জল খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা দূর হতে পারে। কারণ, তামা হজমে সাহায্য করে। এতে থাকা উপাদান ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে, পেটের সমস্যা দূর করে, মেটাবলিজম ঠিক রাখে। তবে, মনে রাখতে হবে, লেবুর জল বা গরম জল যেন তামার পাত্রে না রাখা হয়! তামা হার্টের জন্য ভালো। ধমনীতে রক্ত চলাচল সচল রাখতে সাহায্য করে তামা। আর রক্ত চলাচল ঠিক থাকলে হার্টেও সমস্যা হয় না। ফলে হার্ট ভালো থাকে। 

হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ করে এই ধাতু। শরীরে তামার পরিমাণ কম থাকলে তা রক্তচাপে তারতম্য ঘটায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। তামা কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে রাখে। সব মিলিয়ে হাইপারটেনশন রোধ করতে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অ্যানিমিয়া দূর করতে সাহায্য করে তামা। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকলে অ্যানিমিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে, তা হলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। তামা জলে আয়রন সঞ্চার করে। ফলে রক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়তে পারে। তামার বোতলে জল খেলে অ্যানিমিয়ার সমস্যা কমতে পারে। এর পাশাপাশি, আয়রন কম থাকলে শ্বেত রক্তকণিকাও কমতে পারে। সেই সমস্যাও দূর করতে পারে তামা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন