সমকালীন প্রতিবেদন : সে সাধারণ নয়। দৃষ্টি-প্রতিবন্ধকতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। শরীরের এই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাধাকে অতিক্রম করে এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছটি বিষয়ে লেটার নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হল বনগাঁর দেবজিৎ দাস। তার এই সাফল্যে খুশি তার পরিবার, স্কুল এবং সহপাঠীরা।
বনগাঁর খয়রামারি এলাকার বাসিন্দা দেবজিৎ নিউ বনগাঁ বয়েজ হাইস্কুলের ছাত্র। মাত্র এক বছর বয়সেই পালস পোলিওর সংক্রমণে তার জীবনে বিপদ ঘনায়। এখনও তার চিকিৎসা চললেও দৃষ্টিশক্তি আর ফিরে আসেনি। আর এই অবস্থাতেই তার শুরু জীবন সংগ্রাম। আর পাঁচজন সাধারণ ছেলেমেয়েদের মতো করেই পড়াশোনা, গান-বাজনা, চলাফেরার সঙ্গে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলেছে সে।
ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি গভীর ভালোবাসা তার। আর সেই কারণেই মাত্র চার বছর বয়স থেকেই হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করার অভ্যাস তৈরি করে ফেলে। গানের শিক্ষক তাকে হারমোনিয়াম বাজিয়ে যে গান একবার তুলে দিয়ে যান, নিজের প্রতিভার মাধ্যমে সেই গানই রপ্ত করে তুলতে পারে সে। শ্রবণশক্তি তার এতটাই প্রকট যে, যেকোনও গান কানে শুনে হারমোনিয়ামের রিড চোখে না দেখেও শুধুমাত্র শব্দ শুনে সেই গান অবলীলায় তুলে ফেলতে পারে সে। মূলত সেমি ক্লাসিক্যাল গানই তার প্রিয়। দৃষ্টি-প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করেই বিভিন্ন জায়গায় গান গেয়ে প্রশংসিত হয় সে।
আর পাঁচজন সাধারণ পড়ুয়ার সঙ্গেই সে নিউ বনগাঁ বয়েজ হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। সেখানে প্রতিবছর ক্লাসের পরীক্ষায় পরপর পাস করে আসছে। গৃহশিক্ষকেরা যা পড়িয়ে দিয়ে যান, সেটাই মাথায় রেখে পড়া মুখস্ত করার ক্ষমতা রাখে সে। চোখে না দেখতে পারার কারণে শুধুমাত্র পরীক্ষার সময় রাইটার দিয়ে পরীক্ষা দিতে হয় তাকে। আর এভাবেই এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার মূল্যায়নে ভূগোল বাদে বাকি ৬ টি বিষয়ে লেটার নম্বর পেয়েছে সে। তার প্রাপ্ত মোট নম্বর ৫৬৮। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে যে জীবনে সাফল্য আসতে পারে, তা আবারও একবার প্রমাণ করলো দেবজিৎ। ভবিষ্যতে গানকে সঙ্গী করেই পড়াশোনার জীবনে এগোতে চায় সে। কারণ, গানই তার জীবনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন