সমকালীনপ্রতিবেদন: আপনি কি সারাক্ষণ চকোলেটে মজে থাকেন? মানে চকোলেট ছাড়া কি আপনার একটা দিনও চলে না? আর এই চকোলেট খাওয়া নিয়েই বাড়িতে, বন্ধুবান্ধবের কাছে আপনাকে কথা শুনতে হয়। তবে জেনে রাখুন, আপনি মোটেই কোনও খারাপ অভ্যাস করেননি। বরং চকোলেটের মধ্যে এমন কিছু আশ্চর্য গুণ রয়েছে, যা আপনার চেহারায় প্রতিফলিত হবে। রোজ রোজ গোটা চকোলেট খাওয়ার জন্য আপনার মনের কোণে যদি মোটা হয়ে যাওয়ার সংশয় দেখা দেয়, তা হলে এখনই দূরে সরিয়ে ফেলুন সেসব ভাবনা। এতটুকু আত্মগ্লানিতে ভোগার কারণ নেই। বলে রাখা ভাল, শুধু স্বাদ নয়, এর মধ্যে এমন কিছু গুণ রয়েছে, যার জন্য একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে চকোলেট সবার, বিশেষ করে মেয়েদের অন্যতম পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। শুধু চিনিটুকু বাদ দিয়ে যদি আপনি কোকো বিনের ভালো দিকগুলির দিকে নজর দেন, তাহলে দেখবেন চকোলেট আপনার স্বাস্থ্যরক্ষায় দারুণভাবে সহায়ক। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল, ডার্ক চকোলেট খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ভাল।
চকোলেট কীভাবে আপনার শরীর-মনকে ভাল রাখতে পারে, জেনে নিন।
স্ট্রেস কমায়: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ট্রেস কমাতে চকোলেটের জুড়ি মেলা ভার। যদি আপনি দু'সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন একটি করে ডার্ক চকোলেট খান, তা হলে হাতেনাতে ফল পাবেন। দেখবেন, সারাদিন অফিসে মুখ গুঁজে কাজ করলেও তেমন ধকল মনে হচ্ছে না। কারণ, স্ট্রেসের জন্য যে হরমোন দায়ী, তাকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে চকোলেট। কোকো মস্তিস্কে রক্ত সংবহনের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে বুদ্ধির বিকাশ হয়।
হার্ট ভাল রাখে: গবেষণা বলছে, নিয়মিত চকোলেট খেলে নিয়ন্ত্রণে থাকে রক্তচাপ। এমনকী হৃদরোগের সম্ভাবনাও কমে। শুধু তাই নয়, চকোলেট আপনাকে একাধিক হার্টের অসুখ থেকে দূরে রাখতে পারে। চকোলেট নাকি হৃদরোগের আশঙ্কা এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দিতে পারে। চকোলেটের মধ্যে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে অতিরিক্ত চিনি মেশানো চকোলেটের মধ্যে এসব গুণ পাবেন না। গবেষকদের দাবি, যাঁরা প্রতিদিন চকোলেট খান, তাঁদের বিএমআই অর্থাৎ বডি মাস ইনডেক্স অনেক কম থাকে।
বয়সের ছাপ পড়ে না: চকোলেটের মধ্যে থাকে কোকা ফ্লাভানল নামক একটি উপাদান। এটি শরীরে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না। বয়স্ক মানুষেরা যদি প্রতিদিন দু'কাপ হট চকোলেট খান, তবে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য দারুণ থাকবে, বলছে গবেষণা।
চনমনে মন: চকোলেট মনকে ফুরফুরে রাখতে সাহায্য করে। চকোলেট মানসিক স্বাস্থ্যের দারুণ উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। দক্ষিণ আমেরিকায় প্রাচীনকালে ডায়ারিয়া বা পেটের অসুখে চকোলেট খাওয়ানো হত। ক্ষুদ্রান্ত্রের নিঃসরণে চকোলেটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ডার্ক চকোলেট খেলে আপনি মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি আগ্রহ হারাবেন। ফলে শরীরে চিনি কম ঢুকবে। আপনার ওজন কমতে শুরু করবে।
কোলেস্টেরল কমায়: ডার্ক চকোলেটের তেতো স্বাদ আমাদের শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে। ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। প্রসূতিদের মানসিক চাপ কমাতেও বিশেষভাবে কার্যকরী চকোলেট।
বাজারে দু'ধরনের চকোলেট পাওয়া যায়। ডার্ক চকোলেট ও মিল্ক চকোলেট। আপনাকে খেতে হবে ডার্ক চকোলেট। এই চকোলেট প্রথম প্রথম খাওয়ার সময় একটু তিতকুটে লাগবে। ফলে অল্প অল্প করে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। অবশ্য কয়েকদিন যেতে না যেতেই আপনি এই চকোলেটের প্রেমে পড়ে যাবেন। তবে মিল্ক চকোলেট নৈব নৈব চ। কারণ, এই চকোলেট তৈরি হয় দুধ আর চিনি দিয়ে। যা শরীরের পক্ষে খারাপ।
পুষ্টিবিদ রাখী চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ডার্ক চকোলেটকে আমরা বর্তমানে সুপার ফুড বলে থাকি। এতে উপস্থিত ফ্লাভোনলস ব্লাড সুগার ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমায়, ব্লাড ফ্লো বাড়িয়ে ব্লাড প্রেসারও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়া নিয়মিত ও পরিমিত গ্রহণে রক্তে খারাপ ফ্যাট LDL নিয়ন্ত্রণ করে। মেন্টাল হেলথ রক্ষায় চকোলেটের বিকল্প নেই। ডার্ক চকোলেট এন্ডোরফিন নিঃসরণে সাহায্য করে, যা স্ট্রেস কমায়। এছাড়া ট্রিপটোফ্যানকে যুক্ত হতে সাহায্য করে, যা হ্যাপি হরমোন সেরোটোনিনের উৎস। উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম স্ট্রেস হরমোন করটিসলের ক্ষরণ কমায়, এছাড়াও এতে রয়েছে ফিনাইল alaline যা হল লাভ ড্রাগ। তাই মন ভালো রাখতে ডায়েটে নিয়মিত থাকুক ডার্ক চকোলেট। এতে উপস্থিত পলিফেনল প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে গাট হেলথ ভালো রাখে। যার ফলে হজমশক্তি বাড়ে। এছাড়া ওজন কমাতেও সাহায্য করে। চকোলেটে উপস্থিত ফাইটোকেমিক্যাল দেহে তৈরি হওয়া ফ্রি রেডিক্যাল নিষ্কাশন করে। জেনেটিক ড্যামেজ নিয়ন্ত্রণ করে ও ক্যানসারের আশঙ্কা কমায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন