সমকালীন প্রতিবেদন : পোষ্য মানেই ভালবাসার নিঃশর্ত বন্ধন। প্রিয় পোষ্যের কেউ প্রশংসা করলে আপনিই ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে হাসির রেখা। অনেকের কাছেই জীবনের আক্ষরিক পূর্ণতা এনে দেয় একটি পোষ্যের উপস্থিতি। তাকে ঘিরে জড়িয়ে থাকে অনেক ভালবাসা, আদর। ঠিক কোন রসায়নে একটি পোষ্য গোটা পরিবারের ভালবাসার ধন হয়ে ওঠে জানা নেই। যা আছে সবটাই অনুভূতি।
শর্তহীন ভালবাসায় অনেকগুণ রিটার্ন। কিন্তু সেই পোষ্য যদি আচমকা মারা যায়? কেউ ডুকরে কাঁদেন। কারও বাড়িতে হাঁড়ি চড়া বন্ধ হয়ে যায়। কেউ আবার প্রিয় সঙ্গীকে হারানোর যন্ত্রণা বুকে চেপে শেষযাত্রায় ফুলে ফুলে সাজিয়ে দেন নিথর পোষ্যের বিছানা। সমাধি গড়েন। কিংবা মূর্তি। আর এভাবেই মৃত্যুহীন হয়ে ওঠে প্রত্যেক পোষ্যই। ঠিক যেমন অন্ধ্রপ্রদেশের এই ঘটনা।
সুনকার জন্না প্রকাশ রাও একটি ছোট্ট কুকুর ছানা এনেছিলেন বাড়িতে। স্নেহ, মমতায় বড় করে তোলেন তাকে। এক বছর, দু'বছর নয়, ন'বছরের বেশি সময় তাঁদের সঙ্গে ছিল কুকুরটি। আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে আচমকা মারা যায় সে। পোষ্যের মৃত্যুতে সেদিন খুব কেঁদেছিলেন প্রকাশ। বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। কেন তাঁর পোষ্যের জীবনটা আরও একটু প্রলম্বিত হল না, ঈশ্বরের কাছে প্রশ্নটা করেছিলেন বারবার। উত্তর মেলেনি।সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুর বদল হলেও পোষ্যকে ভুলতে পারছিলেন না প্রকাশ রাও। ঘরময় তার হেঁটে বেড়ানো, অভিমান, খুনসুটি, কর্তব্যপালন সব যেন চোখে ভাসত সবসময়।
শেষমেশ ঠিক করেন, প্রিয় কুকুরের মূর্তি গড়বেন। তাও আবার যেমন তেমনভাবে নয়। শিল্পীকে ডাকিয়ে এনে রীতিমতো ব্রোঞ্জ দিয়ে তাঁর পোষ্যের অবিকল মূর্তি গড়িয়েছেন প্রকাশ। আর সেই মূর্তির গলায় মালা পরিয়ে, ফুল-চন্দন, মিষ্টি দিয়ে পোষ্যর পঞ্চম মৃত্যু বার্ষিকী পালন করলেন প্রকাশ। আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ প্রার্থনার। নিমন্ত্রিত ছিলেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের জন্য পেটপুরে খাওয়ার আয়েজনও ছিল।
পোষ্যর প্রতি তাঁর এই অকৃত্রিম ভালবাসার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে সময় নেয়নি। তবে এতদিন মূর্তি না থাকলেও গত পাঁচ বছর ধরে নিয়ম করে পোষ্যর মৃত্যুদিন পালন করে এসেছেন প্রকাশ। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রকাশ জানান, পোষ্যটি তাঁর সন্তানের মতোই ছিল। তাকে তিনি দীর্ঘদিন ধরে লালনপালন করেছেন। কোলেপিঠে বড় করে তুলেছেন। যতদিন প্রাণীটি বেঁচেছে, সে তার আনুগত্যের প্রমাণ দিয়েছে। পরিবারের সবার সঙ্গে মিলেমিশে থেকেছে। ফলে তার মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা তাঁদের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন