অণুগল্প
সীতা কিংবা নদীর গল্প / অমিতকুমার বিশ্বাস
◼️ইছামতীর ঘাটে ওরা জল আনতে যায়। স্নান করে, গল্প করে।
ওরা সীতা ও ধলি। ওরা নেড়াপোতা গাঁয়ের মণ্ডলবউ। সীতা যেন পেড়িকাদা, অথচ উনুন লেপার পর কাদার রূপ লেগে যায় তরতর আগুনে। আর ধলি দু'দু-বার জ্বালানো মোষের দুধ। থলথলে গা-গতরে সর পড়েছে পুরু।
ঘাটে স্বপ্ন ছিটায় একে-অন্যের গায়। সাঁতারের ভিতর শরীর জাগে। জলে জাগে কাম।
নদী এমনই— হাসায়, কাঁদায়—ভাসায়ও বহুদূর।
কাম ও কুমির জেগে ওঠে জলে। ঘাটের বান্ধালের ওপাশে ওঁত পেতে থাকে কুমির— কামের তোড়ে যদি কেউ ভেসে যায় বান্ধালের ওপারে...
একদিন লক্ষ্মী ওভাবেই নিরুদ্দেশ। পা টানতে-টানতে নিয়ে যায় কুমির-কামোটে। সতর্ক সকলেই।
কুমির বোঝে — জলে থেকে হবে না কিছুতেই। তাই নেড়াপোতার কুঠিতে উঠে আসে। হ্যাট নেয়, ছড়ি নেয়। তবে অন্য কুঠিয়ালদের মতো দিনেদুপুরেই বলে না —উকে উঠাইয়ে নিয়া আয় হিয়ার, রাইট নাউ! গোওওওওওওও...!
বরং ঘরের পেছনে ইছামতী-পাড়ে ওঁত পেতেই থাকে বান্ধালের মতোই।
একদিন মোতি আর বিলু মণ্ডল গেল নঞ্চেপোতা। নৌকোয় আঁশপাট তুলে ফিরবে রাতে।
পাড়ে নড়ে ওঠে কুমির। হাসে খিকখিক। টেনে নেয় টুপি ও ছড়ি। বলে, হিসসসসসসস! কাম উইদ মি।
অন্ধকার আলপথ বুকে হেঁটে যায় সরীসৃপ। চুপিসাড়ে ঘরে ঢুকেই খপ! মণ্ডলবাড়ি থেকে কুঠিতে নিয়ে আসে সীতা-ধলিকে।
ধলি সবার—উপহার।
সীতাকে নিয়ে ঢুকে পড়ল গর্তে।
ভোররাতে পাট নিয়ে ফেরে। দেখে, বউ নাই!
ছোটে — ধুধু মাঠের এপার-ওপার। নীলগাছ তছনছ।
নদী থেকে কখন যে উঠোনে উঠে এল কুমিরগুলো— গাঁয়ের কেউ কিছুই টের পায়নি।
পরদিন দশ গাঁ নিয়ে মোতি-বিলু ছুটল কেষ্টনগর।
তার পর তদন্ত তদন্ত তদন্ত...
একমাস...দু-মাস...তিনমাস...।
কেউ উঠল চতুর্থ মাসে।
মোতির মুখোমুখি সীতা, এতদিন পর —মেমের পোশাকে। চমকে ওঠে আদালত। ধলি নেই যদিও।
মোতি আগুনচোখে তাকায় সীতার দিকে। এতদিন যে হেঁসো নিয়ে ঘুরেছে কুমির কোপাবে বলে — আজ কোপায় বুঝি তাকেই!
অশ্রু সামলায় সীতা। বেমানান পোশাক ক্রমশ মানানসই হয়ে ওঠে সীতার গায়ে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলে সে—হুজুর, সবই আমার ইচ্ছায়!
ব্যস, কেস ডিসমিস।
নদী এমনই— হাসায়, কাঁদায়—ভাসায়ও বহুদূর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন