সমকালীন প্রতিবেদন : অভাব তাদের সংসারের নিত্যদিনের সঙ্গী। সেই অভাবকে সঙ্গী করেই অ্যাথলেটিক জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের সিন্দ্রানী গ্রামের অ্যাথলিট, সিন্দ্রাণী সাবিত্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী পায়েল বিশ্বাস।
পায়েলের বাবা রঞ্জন বিশ্বাস কাঠমিস্ত্রি, ঠাকুরদা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস রাজমিস্ত্রি। তাঁদের সামান্য আয়ে কোনওরকমে দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটে। সিন্দ্রানী গ্রামে রাস্তার ধারে সরকারি জমির ওপর ছোট্ট টিনের ঘরে বসবাস তাদের। পায়েলরা তিন ভাইবোন। পায়েলই বড়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় পায়েল আঞ্চলিক প্রাইমারি স্কুল স্পোর্টসে এক'শ, দুশো মিটার দৌড় এবং লঙজাম্পে তিনটি পদক জয় করে। এরপর সার্কেল স্পোর্টসেও একই ফল করে। সাবডিভিশন স্পোর্টসেও চ্যাম্পিয়ন হয় সে। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় সিন্দ্রাণী সাবিত্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের হয়ে সাবডিভিশন মিটে অনুর্ধ্ব চোদ্দ বছর বিভাগে খালি পায়ে অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সীদের হারিয়ে এক'শ মিটার দৌড়ে এবং লঙজাম্পে প্রথম হয় পায়েল। কিন্তু কোচিং না নেওয়ার কারণে জেলা মিটে ব্যর্থ হয়। পায়েলের ভেতরে সম্ভবনা আছে আঁচ করে পায়েলকে নিয়মিত অনুশীলন করানোর অনুমতি চাইতে সিন্দ্রাণী সাবিত্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক গৌর রায় পায়েলের বাবা মায়ের কাছে নিজে থেকে হাজির হয়ে যান। আর তারপর থেকেই সিন্দ্রাণী আ্যাথলেটিক আ্যাকাডেমীতে গৌর রায়ের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত অনুশীলনে মগ্ন হয়ে পরে সে। তবে প্রাকটিস কিটস, সুষম খাবার জোগাড় করা পায়েলের পরিবারের ক্ষেত্রে কষ্টকর হয়ে পরে। এক্ষেত্রে গৌরবাবুই ওর খেলাধুলা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নেন।
পায়েলের মা পূর্ণিমা বিশ্বাস অসুস্থ। তাই প্রাকটিস সেরে বাড়িতে গিয়ে সংসারের কাজে হাত লাগাতে হয় তাকে। আর্থিক অনটনের কারনে আলাদা করে সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা তো দূরের কথা, অনুশীলন সেরে বাড়ি ফিরে অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হয় পায়েলকে। এতো প্রতিকুলতা সত্ত্বেও মেয়েটি অসম্ভব জেদি। চাবুকের মতো চেহারার তেরো বছরের এই মেয়েটি সিন্দ্রাণী আ্যাথলেটিক আ্যাকাডেমীর অনুশীলনে হেলায় হারিয়ে দেয় বড় বড় মেয়েদেরকে।
পায়েলের প্রশিক্ষক গৌর রায় পায়েলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত। তিনি জানালেন, 'এই মেয়ে যদি এইভাবে প্রাকটিস চালিয়ে যেতে পারে, তাহলে আগামী দিনে কেরালার মতোই এই বাংলা একজন পি টি ঊষাকে পেতে পারে, যে জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক আঙিনায় বাঙলার নাম উজ্জ্বল করবে।' গৌরবাবুর আবেদন, সরকার খেলাধুলার ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা নিক, যাতে পায়েলের মতো প্রতিভারা নিজেদেরকে প্রমাণ করার সুযোগ পায়। না হলে সুযোগের অভাবে পায়েলের মতো প্রতিভারা অচিরেই হারিয়ে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন